দিরাইয়ে বাউল রণেশ ঠাকুরের ক্ষতিগ্রস্ত গানের ঘর পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক

দোষীদের আইনের আওতায় এনে ও বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে
বিশেষ প্রতিনিধি :
বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের শিষ্য বাউল রণেশ ঠাকুরের উজান ধলের বাড়ির বাউল আসর ঘর পুড়ানোর ঘটনায় ১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত যুবকের নাম ফরহাদ। সে উজানধল গ্রামের এনাম উদ্দিনের ছেলে। বুধবার বিকালে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উজানধল গ্রামে যান এবং বাউল রণেশ ঠাকুরকে নতুন ৩ বালি টিন দিয়ে তার গৃহ নির্মাণের আশ্বাস দেন।
বাউল রণেশ ঠাকুরের গানের আসর ঘর কেন পুড়ানো হলো, এই নিয়ে বুধবারও উজানধলের মানুষের মধ্যে আলোচনা ছিল। গ্রামের কেউ কেউ বলেছেন রণেশ ঠাকুরের বাড়ি’র সামনের কিছু জায়গা নিয়ে গ্রামের কালাম মিয়ার সঙ্গে রণেশ ঠাকুরের বিরোধ রয়েছে। বিরোধীয় জমিতে গ্রামের ইউপি সদস্য কালাম মিয়াসহ কিছু লোকজন ইতোপূর্বে মাটি ফেলে দখলের চেষ্টা করেছিলেন। এ ঘটনার জের ধরে আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে। আবার কেউ কেউ কেউ বলেছেন, শাহ্ আব্দুল করিম এবং বাউলদের মরমিয়া সুর ও গানের কথাকে যারা ভয় পায়, যারা বাঙালি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চায় তারা এই ঘটনা ঘটাতে পারে। গ্রামবাসী দাবি করেছেন, রণেশ ঠাকুরের বাড়ি’র সামনের যে জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে, এই জমিতে শাহ্ আব্দুল করিম চত্বর করে এই বিরোধের স্থায়ী নিস্পত্তি ঘটাতে।
বুধবার বিকালে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, রণেশ ঠাকুরের বাড়ি নির্মাণ করে দেবে জেলা প্রশাসন।রোববার গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা জ্বালিয়ে দেয় শাহ্ আব্দুল করিমের শিষ্য বাউল রণেশ ঠাকুরের বাউল আসর ঘর। এই ঘটনায় ৫৫ বছর বয়সি এই বাউল ও তার শিষ্য সামন্তের সকল বাদ্য যন্ত্রই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, উজান ধলের রবনী মোহন চক্রবর্তী কীর্ত্তনীয়া ছিলেন। তার ছেলে রুহী ঠাকুর ও রণেশ ঠাকুর বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের অন্যতম শিষ্য বাউল। ওস্তাদ শাহ্ আব্দুল করিম ও বড় ভাই রুহী ঠাকুর মারা যাবার পর ভাটী অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে যে কজন বাউল জনপ্রিয়, এরমধ্যে অন্যতম রণেশ ঠাকুর। বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের বাড়ি’র লাগোয়া রণেশ ঠাকুরের বাড়িতে করোনা কালের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই বাউল আসর বসতো। রণেশ ঠাকুরের বসত ঘরের উল্টোদিকে তার বাউল আসর ঘর। ওখানেই তার নিজের ও শিষ্যগণের যন্ত্রপাতি থাকতো। রোববার রাত ১১ টায় পরিবারের সকলে ঘুমোতে যান। রাত ১ টার পর রণেশ ঠাকুরের বড় ভাইয়ের স্ত্রী সকলকে চিৎকার করে ডাকতে থাকেন। অন্যরা ঘুম থেকে ওঠে দেখেন আসর ঘর পুড়ে যাচ্ছে। পরে আশপাশের লোকজন চেষ্টা করে আগুন নেভালেও পুরো ঘরই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।