মাদক ও যৌন অপরাধের ফাঁদে যুব সমাজ

এনামুল হক ।। দিনদিন নৈতীক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে কিশোর ও যুব সমাজ। বিশেষ করে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরা নানা অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িয়ে পড়ছে সহসাই। এক শ্রেণীর বখাটে ও উচ্চ বিলাসী সঙ্গীর কারনেই এমনটি হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। সেই সঙ্গে অভিভাবকদের উদাসীনতা, দায়ীত্বহীনতা এর জন্য অনেকটা দায়ী বলে মনে করছেন নগরীর সচেতন মহল। বুঝে না বুঝে অনেক কোমল মতি কিশোর কিশোরী ইদানীং জড়িয়ে পড়ছে যৌন অপরাধে। ফলে পরিবার ও সমাজে ঘটছে নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনা।

সম্মানের ভয়ে অনেক পরিবার অনেক ঘটনা নিজেদের মধ্যে চাপা দিয়ে রাখে। আবার অতি শাসনের ফলে স্বেচ্ছায় ডেম কেয়ার হয়ে যাচ্ছে কিশোর কিশোরীরা। পাশাপাশি ইদানীংকালে অভিভাকদের ব্যস্ততার সুযোগে খারাপ পথে পা বাড়াচ্ছে তারা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, অবাধ তথ্য প্রবাহের এই যোগে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম মোবাইল ফোন এবং সামাজিক নেটওয়ার্ক ফেসবুকের মাধ্যমে প্রথমে বন্ধুত্ব তারপর প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে অনেক তরুন তরুনী। সিলেট নগরীর সাইবার ক্যাফ ও স্নকার ক্লাব গুলো হয়ে উঠছে এখন রিতীমত ডেটিং স্পট। এমনকি প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠার পর এক সময় শারীরীক সম্পর্ক গড়ে তোলার কারনে দ্রুত বিয়ের প্রবনতাও বাড়ছে। আর এতে সন্দেহের দোলাচালের কারনে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। নগরীর বিভিন্ন সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, নগরীর এক শ্র্রেনীর ধনীর দুলাল বিনোদন পিয়াসী অতি উৎসাহী তরুন-তরুনী প্রেমের জাল ফেলে যৌন অপরাধ বা সেক্স ক্রাইমে জড়িয়ে পড়ছে। এরা নিজের সঙ্গীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহুর্ত মোবাইল বা ক্যামেরায় ধারন করে শুরু করে প্রতারনা। কখনও টাকা বা একাধিক বার অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট নগরীর অদুরে অবস্থিত বিনোদন পার্কর্ সহ বিভিন্ন জায়গায় চলে তরুন তরুনীদের অবাধ প্রেমলীলা।

স্কুল কলেজ ফাকি দিয়ে সঙ্গিকে নিয়ে কোথায় গেলে কেউ দেখবেনা, কেউ ডিষ্টার্ব করবে না, কোথায় গেলে পাওয়া যাবে একটু নির্জন জায়গা, এমন স্পটকেই বেছে নিচ্ছে তরুন তরুনীরা। দিনের বেলায় স্কুল-কলেজ ফাকি দিয়ে সঙ্গির সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো আর রাতে নিজ রুমে বসে কম্পিউটারের পর্দায় নীল ছবির দৃশ্য দেখে মোবাইলে সারা রাত কথা বলে পরের দিন ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছেনা অনেক ছাত্র ছাত্রী। ফলে অকালেই ঝরে পড়ছে অনেক মেধাবী তরুন তরুনী। দিন দিন মাদকের প্রতিও আসক্ত হচ্ছে সিলেটের তরুন সমাজ। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, আজ কালের সন্তানরা কথা শুনেনা। এটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি আমাদের ব্যাস্ততার সুযোগে খারাপ বন্ধুদের সাথে চলাফেরা করে বিপথগামী হচ্ছে সন্তানরা।

এ দিকে নগরীর বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে আলাপ কালে তারা জানান, আজ কাল লেখা পড়ার কোন পরিবেশ নাই। বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের দেখলে মনে হয়, একটি ছেলের সাথে একটি মেয়ে বন্ধু , কাধে ব্যাগ, হাতে মোবাইল, কানে ইয়ারফোন না থাকলে যেন ছাত্র হিসেবেই বুঝা যায়না। এরকম চলতে থাকলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের হাজারো বছরের লালিত সামাজিক মূল্যবোধ।

এজন্য ব্যাক্তি ও পরিবারের ভিতওের ধর্মীয় নৈতিকতার প্র্যাকটিস বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ। তবে অনেক ধর্মীয় নেতৃবৃন্দেও পরিবাওে অশান্তি এবং তাদেও সন্তানরাও বিপথগামী হওয়া নিয়ে আশংকায় আছেন অনেকেই। বিষয়টি সমাজে বড় দুশ্চিন্তা হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল।

লেখক- সাংবাদিক, কলামিষ্ট।