শাল্লায় অপ্রয়োজনীয় বাঁধে বরাদ্দ বেশি

শাল্লা প্রতিনিধি

প্রতিবছরই সরকার হাওর রক্ষা বাঁধের নামে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছেন। আর এসব বরাদ্দের কাজ কৃষকদের মাধ্যমে করানোর জন্য নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে বাঁধের নিকটে জমি থাকা ব্যক্তিরাই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি ও সদস্য সচিব হিসেবে নির্বাচিত হবে। কিন্তু এসব কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই শাল্লা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও কাবিটা স্কীম প্রনয়ন কমিটি নিজেদের ইচ্ছেমতো পিআইসি গঠন করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ নিয়ে উপজেলায় আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় তুলেছেন। শুধু তাই নয়, শাল্লা উপজেলায় এবছর অপ্রয়োজনীয় বাঁধগুলোতে বেশি বেশি বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ছায়ার হাওরে উপ-প্রকল্প নং ৯৮এর সাইনবোর্ডে ৪৮০ মিটার জায়গায় ১৫ লাখ ১৩ হাজার ১৪৩ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কাগজে কলমে দেখানো হলেও বাস্তবে দেখা যায়নি ৪৮০ মিটারের কাজ। এই পিআইসির সামনের দিকে উঁচু কবরস্থান। আর পেছনে সাব-মারজেবল রাস্তা। কবরস্থানের সামনের দিকে ১০/১৫ মিটার ক্লোজার থাকলেও ৪৮০ মিটার প্রাক্কলন ধরে অপ্রয়োজনীয় বাঁধ তৈরি করে ভাগ বাটোয়ারার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা চলছে। এছাড়াও মনুয়া গ্রাম এলাকায় এই বাঁধ থাকলেও এই গ্রামের কোনো ব্যাক্তিকে পিআইসির সভাপতি কিংবা সদস্য সচিব করা হয়নি। এই এলাকায় যার কোনো জমি নেই তাদেরকেই পিআইসির সভাপতি ও সদস্য সচিব করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আরো দেখা গেছে, বাঁধে সামন্য কিছু জায়গায় মাটি ফেলে দুরমুশ না করেই কাজ শেষের দিকে নিয়ে আসছেন। যে ক্লোজারে মাটি ফেলার কথা সেখানে না ফেলে গত বছরের অক্ষত বাঁধে মাটি ফেলা হয়েছে। অর্থ্যাৎ হাওর রক্ষা বাঁধের চেয়ে সামনের কবরস্থানই অনেক উঁচু রয়েছে। ফলে এই বাঁধটি অপ্রয়োজনীয় বলে দাবী করছেন স্থানীয় কৃষকরা। অন্যদিকে বাহাড়া ইউনিয়ন থেকে হবিবপুর ইউনিয়নের ভান্ডারবিল উপ-প্রকল্প ২৭ নং নওয়াগাও গ্রামের নিতেশ দাসকে সভাপতি করা হয়েছে। বাহাড়া ইউনিয়ন থেকে কি ভাবে হবিবপুর ইউনিয়নের হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ পায় এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় কৃষক বাতেন মিয়া বলেন, এখানে এই পুরো বাঁধের কোনো প্রয়োজন ছিল না। যেখানে বাঁধ করার কথা সেখানে মাটি না ফেলে অপ্রয়োজনীয় স্থানে মাটি ফেলা হয়েছে। কবরস্থানের সামনে কিছু জায়গা ভাঙ্গা রয়েছে। এই ভাঙ্গায় মাটি ফেলইে যতেষ্ট। কবরস্থানের পেছনে মাটি ফেলার কোনো প্রয়োজন নাই। কবরস্থান ডুবে হাওরে পানি প্রবেশ করার কোনো সম্ভাবনা নাই। তবে এই প্রকল্পের সভাপতি প্রদ্যুৎ দাসের এই হাওরে কোনো জমি নেই বলে তিনি জানান।
কৃষক লাহেজ মিয়া বলেন, প্রতি বছরই সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে হাওরের বাঁধ দেয়া হয়। এসব বাঁধে যদি তদারকি করে পিআইসি গঠন করা হত তাহলে অপ্রয়োজনীয় বাঁধগুলোর নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ পেত না সিন্ডিকেটেরা।
প্রকল্পের সভাপতি প্রদ্যুৎ দাস বলেন, এই হাওরে আমার জমি নেই এটা সত্য। তবে উপজেলা কমিটি আমাকে পিআইসি দিয়েছে বিধায় আমি কাজ করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও কাবিটা স্কীম প্রনয়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মোক্তাদির হোসেনের মুঠোফোনে একাধিক বার  যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি। কারন তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
শাল্লা উপজেলা শাখা কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমি নতুন আসছি। মাঠ পর্যায়ে তদারকি করছি। এগুলো মুলত আগের প্রকৌশলী মহোদয় দিয়ে গেছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-২) শফিকুল ইসলাম বলেন, অপ্রয়োজনীয় বাঁধ চিহ্নিত করার জন্য পুনরায় আবারো তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন আসলে বোঝা যাবে কোনটি অপ্রয়োজনীয় বাঁধ