শাল্লায় কালনীর ভাঙনে হুমকিতে স্কুল ও বাজার

সুব্রত দাশ (খোকন)ঃ

শাল্লা উপজেলায় কালনী নদীর ভাঙনে বিলিন হয়ে যাচ্ছে অর্ধশত বছরের পুরোনো নোয়াপাড়া গ্রাম, একই সঙ্গে হুমকিতে আছে গ্রাম সংলগ্ন নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রতাপপুর বাজার, বাজার সংলগ্ন শাসখাই বাজার যাওয়ার রাস্তা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘর বাড়ি সহ নানা স্থাপনা। নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি জানিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার কালনী নদীর দক্ষিণ পাড়ে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর বাজার এবং উত্তর পাড়ে প্রতাপপুর বাজার ও নোয়াপাড়া গ্রাম। নদীর দক্ষিণ পাড়ে চর পরছে এবং উত্তর পাড়ের প্রতাপপুর বাজার ও নোয়াপাড়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘর বাড়ি সহ নানা স্থাপনা আস্তে আস্তে নদীর করাল গ্রাসে তলিয়ে যাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে নোয়াপাড়া গ্রাম ও প্রতাপপুর বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে নদী ভাঙন চলছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় নোয়াপাড়া গ্রামের প্রায় ৯০টি পরিবারের বাস ছিল। বিগত ৩/৪ বছরের মধ্যে ৮৫টি পরিবার এবং গ্রাম সংলগ্ন প্রতাপপুর নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে আছে নোয়াপাড়ার বাকি ৫টি পরিবার, নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রতাপপুর বাজার।
স্থানীয় বাসিন্দাদের আরো অভিযোগ গত বছরের মে-জুন মাসে নদী ভাঙন রোধে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নোয়াপাড়া গ্রামের দক্ষিণ পার্শ্বে প্রায় ৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু সঠিক নিয়মে না ফেলায় নদী ভাঙন রোধে কোনো কাজে আসেনি। সরেজমিনে নদী পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র ৬ মাস পূর্বে ফেলা জিও ব্যাগের কোন চিহ্নই নেই।
প্রতাপপুর বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী তরুনীকান্ত দাস বলেন- নদী ভাঙ্গন রোধে প্রায় ৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এগুলো কোন কাজে আসেনি। নদীর ¯্রােত যেখানে ধাক্কা দেয়, সেখানে না ফেলে নদীর ভাটিতে আধা কিলোমিটার পূর্বে ফেলা হয়েছে। আমরা বাধা দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইঞ্জিনিয়ার আমাদের পরামর্শ শুনেনি, ফলে নদী ভাঙন রোধে এই জিও ব্যাগ কোনো কাজে আসেনি। সরকারের এতগুলো টাকা জলে গেল। আমাদের বাড়ি ঘরও রক্ষা হচ্ছে না।
নোয়াপাড়া গ্রামের টিকে থাকা ৪টি ঘরের মালিক অগস্থ, চন্দ্রকান্ত, নিতিশ ও সবুজ বলেন- এখন নদীর পানি কম থাকায় ভাঙন কম হচ্ছে, মে-জুন মাসে নদীর পানি বাড়বে, তখন ভাঙন আরও প্রবল হবে। আমাদের ঘরও নদীগর্ভে তলিয়ে যাবে। তখন আমরা কোথায় যাব, কোথায় থাকব, একথা ভেবে সারারাত ঘুমাতে পারি না।
নোয়াপাড়া সর: প্রা: বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হৃষিকেশ তালুকদার বলেন- চোখের সামনে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আমার স্ক্যাচমেন্ট এরিয়ার নয়াপাড়া গ্রামটি বিগত ২/৩ বছরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেল। আমার স্কুলে আসার রাস্তাটিও নদী ভাঙনের পথে। স্কুল হতে আর মাত্র ৪/৫ হাত দূর নদীর পাড়। আগামী মে-জুনে নদীর পানি বেড়ে ভয়াল রূপ ধারণ করবে তখন আমার বিদ্যালয়টিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। বিদ্যালয়টি রক্ষায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে, নতুবা বিদ্যালয়টিকে বাঁচানো যাবে না।
প্রতাপপুর বাজারের ব্যবসায়ী ও বাহাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পিযুষ কান্তি দাস বলেন- বাজারের দক্ষিণ দিকের ৮/১০ টি ঘর ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পাড় যদি ব্লক দিয়ে না বাঁধা হয় তাহলে আগামী ১/২ বছরের মধ্যে বহু বছরের পুরাতন আমাদের এই বাজারটিও এক সময় নদীর করাল গ্রাসে তলিয়ে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন- প্রতাপপুর বাজার ও নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য আমরা অতিসত্বর প্রকল্প প্রণয়ন করে কাজ শুরুর ব্যবস্থা করব। ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও বাজার কমিটি মিলে নদী ভাঙনের ছবিসহ উপজেলা চেয়ারম্যানের সুপারিশ সহ স্থানীয় এমপির ডিও লেটার নিয়ে আমাদের কাছে আবেদন করলে প্রকল্পটি দ্রুত তৈরি করা যাবে। নতুবা প্রকল্প তৈরি করতে বছর খানেক লেগে যাবে।