স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে জনজীবন

সুব্রত দাশ খোকন, শাল্লা

গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা, শাল্লা উপজেলা সদরের ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজারের সোনালী ব্যাংকের সামনের রাস্তায় ভ্রাম্যমান সবজি ব্যবসায়ী মেদার রুবেল মিয়া (২৩) ও ভেড়াডহরের রমেশ বৈষ্ণব (৩৫) সহ অনেকেই শিম, টমেটো, করলা, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রির উদ্দেশ্যে। করলা ও শিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা ও টমেটো ৪০ টাকা দাম হাঁকলেন। ক্রেতার প্রশ্ন প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেশি কেন ? বিক্রেতার জবাব, নিজের ক্ষেতের টাটকা সবজি ও ফরমালিনমুক্ত, তাই। পাশেই দাঁড়ানো আরেকজন ক্রেতা জিজ্ঞেস করলেন, ক্ষেতে কীটনাশক কয়বার দেও ? বিক্রেতার উত্তরÑ সপ্তাহে ৪/৫ বার। তখন উপস্থিত সব ক্রেতা আঁতকে উঠলেন এবং সমস্বরে সবাই একসাথে বললেন- এইটা কি কও ? এটা তো ফরমালিনের চেয়েও বেশি বিষাক্ত ? বিক্রেতার পাল্টা উত্তরÑ সবজিকে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এবং বেশী ফলন পেতে হলে বেশি বেশি কীটনাশক দিতেই হবে। নিলে নেন, না নিলে না নেন ? যাদের ভালো মনে হবে তারাই নিবে। আমাদের মাল অবিক্রত থাকবে না। বিক্রেতা রুবেল ও রমেশের নির্বিকার উত্তর।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত শাল্লার সবজির জন্য প্রসিদ্ধ ও সবজি চাষ করে সাবলম্বি হওয়া ৩টি গ্রাম ভেড়াডহর, মেদা ও মুছাপুরের সবজি ক্ষেত ঘুরে এবং উক্ত গ্রামের সবজি চাষীদের অন্তত ৩০ জন কৃষকের সাথে কথা বলে কীটনাশকের বহুল ব্যবহারের এই ভয়াবহ অবস্থা জানতে পারা যায়। তারা সবাই সপ্তাহে ৪/৫ বার কীটনাশক (যেমন ক্যারেটে, সবিক্রন, ভিরতাকো, থিউভিট, টিল) সবজি ক্ষেতে প্রয়োগ করেন। অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগকৃত সবজি খেলে মানব দেহে দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এতে মোটেই ভ্রুক্ষেপ নেই সবজি চাষীদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা: মো: নুরুল হুদা মজুমদার বলেন- অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহৃত সবজি খেলে মানুষের স্বল্প মেয়াদে পেটের যে কোন সমস্যা এবং লিভার ও কিডনীর সমস্যা দেখা দিবে। ভবিষ্যতে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এড. দিপু রঞ্জন দাশ বলেন- বিষয়টি খুবই গুরুতর। আমি উপজেলা পরিষদের মিটিংএ বিষয়টি উত্থাপন করব এবং সবজি চাষিদের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে কৃষি অফিসারদের সাথে পরামর্শ করে কীভাবে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা যায় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করব।
উপজেলা কৃষি অফিসার আবু মো : মনিরুজ্জামান (অ:দা:) বলেন- বিষ প্রয়োগের বিষয়টা মূলত নির্ভর করছে কোন বিষটা দিচ্ছে তার উপর। যেমন কোনো কোনো বিষ আছে প্রয়োগের পর ৫ দিন এটার ক্ষতিকর প্রভাব থাকে এবং কোনটির ৩দিন। আবার কিছু কিছু বিষ আছে যেটা ধুলেই এর প্রভাব শেষ হয়ে যায়। তবে সিজনে ৩/৪ বার ক্ষেতে কীটনাশক দেওয়া যায়। কিন্তু এরা যদি সপ্তাহে ৪/৫ বার কীটনাশক দেয় তাহলে তো সিজনে ৩০/৪০ বার হয়ে যায়। মানে এটা খাওয়ার অনুপযোগী। আমি মাত্র ২/৩ দিন হয় শাল্লার অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়েছি। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে শাল্লার সবজি চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।