দিরাই কালিয়াকুটা হাওরপারে শোকের মাতম !!

নিজস্ব প্রতিবেদক,কালিয়াকুটা হাওর থেকে ফিরে ঃ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কালিয়াকুটা হাওরে নৌকা ডুবির ঘটনায় নারী ও শিশুসহ  ১০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগীতায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল বিশাল হাওরের বিভিন্ন জায়গা থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম  হয়েছে। মর্মান্তিক নৌকা ডুবির ঘটনায় নিহতরা হলো দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের  মাছিম পুর গ্রাামের বাবুল মিয়ার ছেলে শামীম (২) ও বদরুল মিয়ার ছেলে আবির (৩), জাসদ মিয়ার মেয়ে শান্তা বেগম (৩), আরজ আলীর স্ত্রী রহিতুন নেছা ও তার মেয়ে তাছমিনা বেগম (১১), একই পরিবারের মা-সন্তানসহ  চরনারচর ইউপির নোয়ারচর গ্রামের আবজল মিয়ার স্ত্রী আজিরুন নেছা (৩৫) তার দুই ছেলে আসাদ মিয়া (৫) এবং সোহান মিয়া (২), পেরুয়া গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে শহিদুল (৪),  নছিব উল্লার স্ত্রী করিমা বিবি (৭০)। বুধবার বেলা সাড়ে ১২ টায় উদ্ধার কাজ শেষে নিহত ১০ জনের লাশ পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও  থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে চরনারচর ইউনিয়নের পেরুয়া গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলের বিয়ে (বুধবার) উপলক্ষে ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে পরিবারে লোকজন নিয়ে বিভিন্ন গ্রামের নিকটাত্মীয়দের নিজ বাড়িতে আনতে বের হন। সন্ধ্যা বেলা পাশ্ববর্তী রফিনগর ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামের আত্মীয়দের নিয়ে নিজ বাড়ীর উদ্দ্যেশে  রওয়ানা দেন। এ সময় মাঝিসহ ফিরোজ মিয়ার আত্মীয় মোট ৩১জন লোক নিয়ে বাড়ী ফেরার সময় কালিয়াকুটা হাওরের আইনল বিলের পাশে যাত্রী বোঝাই নৌকাটি হঠাৎ প্রচন্ড ঝড়ের কবলে পরে ডুবে যায়। সাথে সাথে আশপাশের গ্রামের মানুষ  ইঞ্জিন চালিত ও  হাতে বেয়ে নৌকা নিয়ে অকুস্থলে এসে উদ্ধার কাজে নামে। বৈরী আবহাওয়া  উপেক্ষা করে বিভিন্ন গ্রামবাসী রাত ৯ টা পর্যন্ত চার শিশুকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন বলে মাছিমপুর গ্রামের মুরব্বি জাহেদ মিয়া নিশ্চিত করেন।

খবর পেয়ে রফিনগর ইউপি চেয়ারম্যান রেজুয়ান হোসেন খাঁন ও দিরাই থানা অফিসার ইনচার্জ কে এম নজরুলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল  রাত সাড়ে ৯ টায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে ।  পুলিশ এলাকাবাসীকে নিয়ে রাত ১২ পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ৫মাসের শিশু সন্তানসহ ২১ জনকে জীবিত  উদ্ধার করতে পারে। ৬ জনকে নিখোঁজ রেখে বৈরী আবহাওয়ার কারনে উদ্ধার কাজ স্থগিত করা হয়। বুধবার ভোর থেকে সুনামগঞ্জ থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল, থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী আবারও অভিযানে নামে। দিরাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম নজরুল  জানান, দৈনিক দিরাই-শাল্লা ডটকমকে জানান দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত হাওরের বিভিন্ন জায়গা থেকে নিখোঁজ ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার কাজ শেষে নিহত ১০ জনের লাশ পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।  উপজেলার কালিয়াকুটা হাওরে নৌকা ডুবির ঘটনায় নারী ও শিশুসহ  ১০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু  ঘটনায় নিহতদের পরিবার, নিকটাত্মীয়সহ  হাওরপারের প্রতিটি গ্রামে শোকের মাতম চলছে।  স্বজনহারা শোকার্তদের বুকফাঁটা আর্তনাদ আর কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। এদিকে  উপজেলার কালিয়াকুটা হাওরে নৌকা ডুবির ঘটনায় নারী ও শিশুসহ নিহত ১০ জনের পরিবারে মাথাপিছু ১০ হাজার করে নগদ অর্থ অনুদান প্রদান করেছে দিরাই উপজেলা প্রশাসন। অনুদানের টাকা পরিবারের লোকদের হাতে তুলে দেন দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরী ও ইউএনও(ভারপ্রাপ্ত) বিশ্বজিৎ দেব। মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছের দিরাই-শাল্লা আসনের সংসদ সদস্য ড.জয়া সেনগুপ্তা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরী।