জীবণ সংগ্রামী নারী শাল্লায় খেয়া পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করেন সুমিত্রা

শান্ত কুমার তালুকদার ,শাল্লা ::
ঘরে বৃদ্ধ স্বামী অসুস্থ, তিন মেয়েসহ নিজের সংসার চালাইতে হাতে বৈঠা নিছি। প্রথম প্রথম ডিঙ্গি বাইতে আমার শরম করতো। অখন আর শরম করেনা। কথাগুলো বলেই কেঁদে ফেললেন সুমিত্র রাণী দাস (৪৩)। ওই নারী শাল্লা উপজেলার ৩নং বাহাড়া ইউনিয়নের রঘুনাথ গ্রামের সুকেন দাসের স্ত্রী।  গতকাল বুধবার শাল্লা সদর থেকে বাহাড়া গ্রামে যাওয়ার উদ্দেশ্যে খেয়াঘাটে গিয়ে দেখা যায়, শাঁখা-সিঁদুর পরা চেহারায় অভাবের করুন চাপ, সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে হাতে বৈঠা নিয়ে ডিঙ্গি নৌকায় লোকজনকে খেয়া পারাপার করছেন ওই নারী। জিজ্ঞাসা করতেই উপরের কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রত্যন্ত উপজেলা শাল্লায় এই প্রথম দেখা জীবিকা নির্বাহের জন্য পুরুষের বদলে একজন নারীর প্রকৃত জীবণযুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া এই সুমিত্রা রাণী দাস। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসেই আজ সুমিত্রা বৈঠা হাতে ডিঙ্গিনৌকায় প্রতিদিন শত শত লোককে খেয়া পারাপার করেই স্বামী ও সন্তান-সন্ততির দু’মুঠো অন্ন যোগান। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, ওই মহিলা ৪বছর যাবৎ এই ঘাটে খেয়া পারাপার করছেন। সুমিত্রা জানান, ঘরে অসুস্থ বৃদ্ধ স্বামী শ্বাস কষ্টে আছেন। একটি মেয়েকে বিবাহ দিয়েছিলেন, সেও স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে তার ঘরেই আছে। আরো দুই মেয়ে নিয়ে বড় বিপদে আছেন তিনি। তিন মেয়ের খাবার, কাপড়-চোপড়, স্বামীর ঔষধপত্র কিনতে সামনে অকুল সাগর দেখছেন সুমিত্রা। আর কোনো উপায় না পেয়ে লজ্জা-শরম ত্যাগ করে হাতে বৈঠা নিয়ে এই ঘাটে সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খেয়া পারাপার করে চলছেন তিনি। সুমিত্রা আরো বলেন, আমার মতো গরীব এলাকায় আর কেউ নাই। টাকা-পয়সা নাই বলে একজন মহিলা হয়ে নৌকা চালাই। আমার নিজের বসত বাড়ি-ঘর নাই। নদীর পাড়ে একটু সরকারি জায়গায় একটি ছোট্ট ছাউনি বানিয়ে জীবন-যাপন করছি। এ অবস্থার মাঝে আমারে দেখার মতো কোনো লোক নাই। শুনছি সরকার মানুষরে ঘর বানাইয়া দিতাছে, আমার ঘরও নাই- বাড়িও নাই, এরপরও চেয়ারম্যান-মেম্বার আমারে দেখে না। এর থ্যাইক্কা আমার নাও বাইয়া খাওনই ভালা। কেউর ধারে গেলাম না। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাল্লা উপজেলায় সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীর তালিকায় সুমিত্রা রাণী দাসের নাম নেই। অপরদিকে ৩নং বাহাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বিধান চন্দ্র চৌধুরী’র সাথে এপ্রতিবেদকের কথা হলে তিনি বলেন, ওই মহিলা আমার কাছে আসলে আমি সাধ্যমতো তাকে মানবিক সহায়তা করে আসছি। তাছাড়া ওই নারী সংসার চালাতে যে কষ্ট করছে তা সত্যিই করুনাদায়ক। জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া সুমিত্রা রাণী দাস সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. দিপু রঞ্জন দাস বলেন- আমি মনে করি, জীবণ সংগ্রামে নারী-পুরুষের কোনো রকম ভেদাভেদ নাই এটাই প্রমাণ করলেন রঘুনাথপুরের সুমিত্রা রাণী দাস। তিনি আরো জানান, আমি ওই নারীর বাড়িতে যাবো এবং সাধ্যমতো তাকে সহায়তা করার চেষ্টা করবো। কথা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, আমরা আজ জাতীয় ভাবে উন্নয়নশীল দেশে থেকে  মধ্য আয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এসডিজি’র কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু ওইসব প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজনদের সার্বিক সমস্যাগুলো জাতীয়ভাবে দেখাই জরুরি। তা না হলে, জাতীয় এসডিজি অর্জন করা সম্ভব নয়।