দুই গ্রুপের প্রস্তাবিত দুই কমিটি জেলা নেতাদের কাছে

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের নির্বাচনী এলাকার দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দল প্রকাশ্য আকার ধারণ করেছে। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং গত পহেলা অক্টোবর জেলা সদরে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে দলের প্রতিনিধি সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়’র দেওয়া বক্তব্যকে ঘিরে দলে বিরোধ দেখা দেয়। দলের বিবদমান দুই গ্রুপ আলাদা আলাদা প্রস্তাবিত কমিটি জেলা নেতাদের কাছে জমা দিয়েছে।
গত পহেলা অক্টোবর সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুগ্মসম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও মিছবাহ্ উদ্দিন সিরাজের সামনেই দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পৌর মেয়র মোশারফ মিয়া ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার নৌকার বিরোধিতা করেছেন বলে তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
এই বক্তব্যের পর দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগসহ উপজেলার তৃণমূলে এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার, পৌর মেয়র মোশারফ মিয়া ও
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রঞ্জন রায় ক্ষুব্ধ হয়ে আলাদা বলয় তৈরি করেন। তারা জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলদের কাছে উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন একটি প্রস্তাবিত কমিটিও তুলে দেন।
বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান নি বিএনপি থেকে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার। স্থানীয়ভাবে কথা রয়েছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে, পৌর মেয়র মোশারফ মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন রায়কে প্রার্থী করেন তিনি-ই। স্থানীয় সাংসদ ড. জয়া সেনগুপ্তা উদ্যোগ নিয়েও বিদ্রোহী প্রার্থী রঞ্জন রায়কে বসাতে পারেন নি।
এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলতাব উদ্দিন ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর আলম চৌধুরী বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তাদেরকে দলের পক্ষ থেকে শোকজ করা হয়।
নির্বাচনের এই বাদানুবাদের বিষয়টি দলীয় প্রতিনিধি সভায় উত্থাপিত হলে দলে বিরোধ চাঙা হয়।
গেল দুর্গা পূজায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়’এর নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা ম-প পরিদর্শনে বের হন। আবার হাফিজুর রহমান তালুকদারের নেতৃত্বেও আলাদাভাবে ম-পে ম-পে পরিদর্শনে যায় আরেকাংশ।
সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দলে কোন বিভেদ বা গ্রুপ নেই, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে আমার নাম ও মেয়রের নাম উল্লেখ করে বলেছে আমরা নাকি নৌকার বিরোধিতা করছি। এই কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ফেইল কইরা মাথা ঠিক নাই, এখন আবুল তাবুল জপের।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, আমরা তার সাথে ইলেকশনে গেছি, বক্তব্য দিছি, শেষ পর্যন্ত সে বিএনপির লোক নিয়া ইলেকশন করায় বিএনপির সব সেন্টারে লীড করছে এবং আওয়ামী লীগের সেন্টারে ভোট কম পাইছে, তার সাথে যে বিএনপির লোক ছিল তার প্রমাণ আছে। উপজেলা কমিটি যেহেতু হবে, আমরাও একটি আহবায়ক কমিটি দাখিল করেছি, তারাও দাখিল করেছে। এখন কোন টা দেবে আর কোন টা দেবে না তা কেন্দ্রের বিষয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যডভোকেট সোহেল আহমদ বলেন, ‘বিতর্ক রয়েছে, তবে কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে চলা ভাল। আমরা সংসদ সদস্য ড. জয়াসেন গুপ্তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ, দলের প্রতিনিধি সভায় আমি যা বলেছি, তা জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ আগে থেকেই জানেন। আমি প্রতিনিধি সভায় আমার আবেগের বিষয়টি নতুন করে জানিয়েছি।’
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী উজ্জ্বল জানালেন, তাঁর জানা মতে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের দুটি প্রস্তাবিত কমিটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।