ওয়ার্ড-ইউনিয়নের সম্মেলন না করেই উপজেলা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা: সুনামগঞ্জে আওয়ামীলীগের তৃণমূল পর্যায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া

বিশেষ প্রতিবেদকঃ

সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড-ইউনিয়ন সম্মেলন না করেই উপজেলা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণায় দলের তৃণমূল পর্যায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ২০১৬ সালে জেলা সম্মেলনের আগে ৭ ইউনিটর সম্মেলন হলেও বাকি ৭ ইউনিটের সম্মেলন হয়নি অন্তত ১৫ বছর ধরে। দীর্ঘ দিন ধরে সম্মেলণ না হওয়া ইউনিটগুলোর সাথে সম্মেলন সম্পন্ন হওয়া ইউনিটের নতুন করে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণার পর নেতাকর্মীরা ক্ষুদ্ধ। অভিযোগ রয়েছে, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর দলের পদ ভাগিয়ে নিতে বি.এন.পি থেকে আসা দলছুট, নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্তরা বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন। এই প্রেক্ষাপটে নেতাকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তপেক্ষ কামনা করেন। তবে জেলার সাধারণ সম্পাদক ব্যরিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন বলেছেন, জেলা সম্মেলনের আগেই সকল শাখার সম্মেলন হয়েছিল। ফলে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় সবকটা ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন সিলেটের ডাককে জানিয়েছেন, জেলা কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে এখনো প্রতিবেদন পাইনি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর যাচাই বাছাই করে কোথায় কোথায় সম্মেলন হয়েছিল আর কোথায় হয়নি, তা দেখার পর চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলার সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনের পরিচালনায় সভায় জেলার ১৪টি ইউনিটের সম্মেলনের জন্যে তারিখ ঘোষণা করা হয়। জেলার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর মধ্যনগর, ৪ নভেম্বর শাল্লা, ৫ নভেম্বর বিশম্ভরপুর, ৬ নভেম্বর জগন্নাথপুর, ৯ নভেম্বর জামালগঞ্জ, ১০ নভেম্বর ধর্মপাশা, ১৬ নভেম্বর ছাতক উজেলা ও পৌর, ১৭ নভেম্বর তাহিরপুর, ২৩ নভেম্ভর সুনামগঞ্জ সদর উপজলো ও পৌর, ২৪ নভেম্বর দিরাই, ৩০ নভেম্বর দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও ২৫ নভেম্বর দোয়ারাবাজার উপজলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দলের ১৪ টি ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের এ সভায় জেলার দলীয় সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন না। সংসদ সদস্যরা জেলা কমিটির কোনো না কোনো পদে রয়েছেন বলে জানা গেছে। দলের জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে জেলার সকল ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও জেলার সম্মেলনের তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পরই তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে জেলা, বিভিন্ন উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৬ সালের ২৫ ফ্রেবুয়ারী জেলা সম্মেলনের আগে দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সম্মেলনের আগে সুনামগঞ্জ সদর ও পৌর, ছাতক উপজেলা ও পৌর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, মধ্যনগর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। এসকল উপজলোর মধ্যে এমনও উপজেলা রয়েছে যেখানে গত ১৫ বছরেও সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। এদিকে যে সব ইউনিটের সম্মেলন করে কমিটি গঠন করা হয়, এর সাথে সম্মেলন না হওয়ার ইউনিটগুলোর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করায় দলের পুরনো বিবাদ নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে বলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আশংকা করছেন। দলের ওয়ার্ড – ইউনিয়ন সম্মেলন না করে উপজেলা সম্মেলন কোন পদ্ধতিতে হবে, উপজেলা সম্মেলনে কাউন্সিলর হবেন কারা এমন প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। ওয়ার্ড- ইউনিয়ন সম্মেলন করে উপজেলা সম্মেলন করতে অন্তত ৩ মাস সময় প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন একাধিক নেতা। এমন পরিস্থিতিতে সম্মেলন হওয়া ৭ ইউনিটের নেতাকর্মীরা বেকায়দায় পড়েছেন। দলের এই মূহুর্তে বিভিন্ন উপজেলায় সুযোগ সন্ধানী ও সুবিধাভোগীরা তৎপর হয়ে উঠেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর বিএনপি’র কমিটিতে আছেন, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী, অনুপ্রবেশকারী, যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্য, এলাকায় বিএনপি- জামায়াতের প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য, বিএনপি’র মনোনীত হয়ে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান এখন আওয়ামী লীগের পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সুবিধাভোগীরা উদ্দেশ্য সফল করতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। জানা গেছে, ১৯ বছর পর ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রæয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সভাপতি হিসেবে আলহাজ্ব মতিউর রহমানকে ও ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলার নেতৃত্ব ঘোষণা দেন। ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ২০১৭-২০১৯ সালের জন্যে জেলার পূর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। এর আগে ১৯৯৭ সালের ১৮ মার্চ জেলার সম্মেলন হয়েছিল। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এর আগেই ইউনিয়ন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। যেহেতু জেলা আওয়ামীলীগের মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি তাই জেলার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হচ্ছে না। বিভিন্ন উপজেলা কমিটির মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি অথচ সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যরিস্টার ইমন বলেন, জেলার সম্মেলন হয় ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রæয়ারি। এই তথ্যের ভিত্তিতে সকল উপজেলা সম্মেলন এর আগেই শেষ হয়েছে। আমরা মনে করছি সকল উপজেলা কমিটির মেয়াদ শেষ, এর জন্য নতুন সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। যথা সময়ে সম্মেলন শেষ করতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, জেলা কমিটি এখনো মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়নি, তাই সম্মেলনের তারিখও নির্ধারন করা হয়নি। যে সকল উপজেলা সম্মেলন হয়েছিল সেগুলোতে সম্মেলন হবে কিনা তা যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি জানান। এদিকে জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতৃবৃন্দ জানান, ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান ছাড়াও তার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী পুত্র মশিউর রহামন জুয়েলকে ১০নং সদস্য করা হয়। সাধারণ সম্পাদক ব্যরিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন ছাড়াও তার সহোদর ড. খায়রুল কবির রুমেল ১১নং সহ-সভাপতি ও আরেক সহোদর ফজলুল কবির তুহিনকে ১২নং সদস্য করা হয়। সহ- সভাপতি এডভোকেট আফতাব উদ্দিন ছাড়াও তার কন্যা নিগার সুলতানা কেয়াকে করা হয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। যুগ্ম সাধারণ সম্পাক আবুল কালাম চৌধুরীর সহোদর শামীম আহমদ চৌধুরীকে দেয়া হয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদ। গঠিত জেলা কমিটির ৭৫ সদস্যদের মধ্যে শুধুমাত্র দিরাই ও শাল্লা উপজেলার ১৩ জন এবং জগন্নাথপুর উপজেলা থেকেই স্থান পেয়েছেন ৫ জন নেতা বিভিন্ন পদে স্থান পান। এর বিপরীতে অন্যান্য ইউনিটগুলোতে সমভাবে মুল্যায়তি হননি তৃণমুলের নেতারা।