গ্রেফতার আতংকে দিরাই আওয়ামী লীগের ১৪০ নেতাকর্মী আত্মগোপনে!

 

নিজস্ব প্রতিবেদক, দিশা ডটকম ঃ- ত্রি বার্ষিক সম্মেলনে সংঘর্ষের পর পাল্টা পাল্টি মামলার আসামি হয়ে গ্রেফতার আতংকে গা-ঢাকা দিয়েছেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৪০ জন নেতাকর্মী। এক মামলায় ৮১ আসামির মাঝে ১৪ জন উচ্চ আদালতের জামিনে ও চার জন পুলিশ কর্তৃক ধৃত হয়ে কারান্তরিন রয়েছেন।অপর মামলার সকল আসামি গ্রেফতার আতংকে রয়েছেন আত্মগোপনে। থানা পুলিশ জানিয়েছে আসামিদের গ্রেফতার অভিযান ও মামলার তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে। ১৪ নভেম্বর দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ মঞ্চে বসা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সহ অর্ধশতাধিক নেতা কর্মী আহত হন। এ ঘটনার বিষয়ে দুই গ্রুপ সুনামগঞ্জের দ্রুত বিচার আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত দুটি মামলা আমলে নিয়ে নিয়মিত মামলা রুজুসহ আগামী ৩১ নভেম্বর ও পহেলা ডিসেম্বর প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জকে আদেশ করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায় সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টা- পাল্টি মামলায় দুই গ্রুপের শীর্ষ নেতাসহ মোট ১৫৮ জনকে আসামী করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া গ্রুপের মাঝে এ সংঘর্ষে কেন্দ্রীয় নেতাসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। ঘটনার তিন দিন পর বৃহস্পতিবার দ্রুত বিচার আইনে সুনামগঞ্জ আদালতে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়াকে প্রধান আসামি করে সুনামগঞ্জ দ্রুত আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়।উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় গ্রুপের অনুসারী কলিম উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ মামলায় আসামী করা হয়েছে দিরাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায়, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহন চৌধুরীসহ ৮১ জনকে। আদালতের নির্দেশ মামলা এফ আই আর করে দিরাই থানা পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে মামলার চার আসামীকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে সোপর্দ করে।আদালত এ চার আসামীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন। মামলার প্রধান আসামি মোশাররফ মিয়াসহ ১৪ জন গেল বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জন্য আগাম জামিন নিয়েছেন বলে জানা গেছে । সংঘর্ষের সাত দিন পর একই আদালতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক প্রদীপ রায়কে প্রধান আসামি করে আরেকটি পাল্টা মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় প্রদীপ রায়ের ভাই দিরাই পৌরসভার মেয়র বিশ্বজিত রায়,উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি কামাল উদ্দিন ও তার ভাই সাবেক সভাপতি আলতাব উদ্দিন, কয়েকজন ইউপি সদস্যসহ ৭৭ জনকে আসামী করা হয়। মামলার বাদী মোশাররফ মিয়া গ্রুপের অনুসারী যুতিমা মিয়া। দিরাই থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সাইফুল আলম বলেন দুই মামলার আসামিদের গ্রেফতার অভিযান ও মামলার তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে।
এদিকে নিজ দলের সম্মেলনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত, মামলা পাল্টা মামলায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী আসামী হয়ে গ্রেফতার আতংকে আত্মগোপনে থাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বর্তমানে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে বলে মনে করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাছাড়া দুই মামলাতেই একই পরিবারের একাধিক লোক আসামী থাকায় তাদের পরিবারের লোকজনকে সীমাহিন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আসামিদের তালিকায় রয়েছেন দিরাই বাজারের মহাজন সমিতির সভাপতি সম্পাদক সহ কয়েকজন বড় বড় ব্যবসায়ী। এর কারনে নিজেদের ব্যবসায়িক ক্ষতির পাশাপাশি দিরাই বাজারে বিচরণ কারী বিপুল সংখ্যক আসামি বাজারে প্রকাশ্যে না থাকায় বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও বেকায়দা আছেন বলে মনে করেন স্থানীয় সুশীল সমাজের নেতারা। এদিকে দলীয় কোন্দল আর মামলায় বিপর্যস্ত আওয়ামীলীগের এ অবস্থা নিয়ে সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কোন নেতাকর্মী মুখ খুলতে রাজি না হলেও সংকট দূর করতে জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।দলীয় সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবাদমান দুটি গ্রুপের দ্বন্দ্ব দুই যুগ আগের। ১৯৯৮ সালে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস ছামাদ আজাদ ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গ্রুপের মাঝে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়ের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা নান্টু রায়। নান্টু রায় হত্যার পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অনুসারী মোশাররফ মিয়া বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন সামাদ আজাদ গ্রুপের অনুসারী কলিম উদ্দিনসহ ২৭ জন । সামাদ আজাদ এর মৃত্যুর পর বিবাদমান দুটি গ্রুপ সুরঞ্জিত – মতিউর ( জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি) গ্রুপে রুপ নেয়। এ দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দিরাই উপজেলার জারলিয়া জলমহাল দখল নিয়ে সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধ হয়ে মতিউর গ্রুপের তিন ব্যক্তি নিহত হয়। তিন খুনের মামলায় সুরঞ্জিত গ্রুপের নেতা প্রদীপ রায়, মোশাররফ মিয়া,হাফিজুর রহমান সহ ৩৯ জনকে আসামী করা হয়।
এদিকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর তার অনুসারী দীর্ঘদিনের মিত্র উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়ার মাঝে দলের নেতৃত্ব নিয়ে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে। বিবাদমান দুই নেতার অনুসারীরা বিগত কয়েক বছর ধরে আলাদা নির্বাচন ও দলীয় কর্মসূচি পালন করেন। সর্বশেষ গত ১৪ নভেম্বর দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রদীপ- মোশাররফ গ্রুপের সংঘর্ষ মঞ্চে বসা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক নেতা কর্মী আহত হন।