তাহিরপুরে সাংবাদিককে গাছে বেঁধে মারধর!

স্টাফ রিপোর্টার
তাহিরপুরে কামাল হোসেন নামের একজন স্থানীয় সাংবাদিককে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করেছে একদল পাথর খেকো। সোমবার দুপুরে তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর ঘাগটিয়া এলাকাই এই ঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় ঐ সাংবাদিককে প্রথমে তাহিরপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় বিকালে তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
কামাল হোসেন দৈনিক সংবাদ ও সিলেটের আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক শুভ প্রতিদিনের তাহিরপুর উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তিনি তাহিরপুর প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক।
সাংবাদিক কামাল হোসেন জানিয়েছেন, সোমবার দুপুরে যাদুকাটা নদী তীরে ৬০ থেকে ৭০ টি পাথর কোয়ারী তৈরী করে একদল পাথর খেকো বালু পাথর উত্তোলন করছে বলে কয়েকজন ফোনে জানায়। পরে বালু উত্তোলনের সংবাদের জন্য ছবি নিতে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। ওখানে পৌঁছার পর পরই ঘাগটিয়া গ্রামের মাহমুদুল ইসলাম, দীন ইসলাম ও রইস উদ্দিন তাকে গালি গালাজ শুরু করে। কেন ছবি তুলেছি, এটা তার বাবার সম্পত্তি কী-না এমন প্রশ্ন করা শুরু করে। এক পর্যায়ে মোবাইলে অন্য কার সঙ্গে কথা বলে মাহমুদুল। এরপরই মাহমুদুল শার্টের কলারে ধরে তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। বলতে থাকে তোকে আজ ছাড়বো না। পরে তারা তাকে ধরে এনে বাজারের একটি গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বেধে রাখে। খবর পেয়ে বেলা আড়াইটার দিকে কামাল হোসেনের পরিবারের লোকজন স্থানীয় বাদাঘাট ফাঁড়ি থেকে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পরে তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
কামাল হোসেন বলেছেন, তাকে বেধরক মারধর করা হয়েছে। তার কপালে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করায় কপাল কেটে গেছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মানিবেগ, মোটর সাইকেল ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে তারা। তিনি এ নিয়ে থানায় মামলা দায়ের করবেন।
যাদুকাটার পাড়ের কামরাবন্ধ গ্রামের রাসেল মিয়া বলেন, পাথর খেকোরা ৭০ টি পাথর কোয়ারীর প্রতি কোয়ারী থেকে ৫০ হাজার টাকা করে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা গত কয়েক দিনে উত্তোলন করেছে বলে জেনেছেন তারা। মাহমুদুল ইসলাম, দীন ইসলাম ও রইস উদ্দিনসহ কয়েকজন এই টাকা আদায় করেছে। ওই সময় এরা বলেছে, টাকা দিলে বালু-পাথর উত্তোলন করলেও প্রশাসনের কেউ বাধা দেবে না।
অভিযুক্ত মাহমুদুল ইসলাম বলেন, আমি সাংবাদিকের উপর হামলা করিনি। এখানে শতশত শ্রমিক ছিল, কে বা কারা মারধর করেছে আমি জানি না। আমি কোয়ারী
থেকেও কোন টাকা উত্তোলন করিনি।
বাদাঘাট ইউনিয়নের সোহালা গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, সারাদেশে ইজারাবিহীন বালু-পাথর মহালগুলোতে উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় এরা কীভাবে কোয়ারী তৈরী করে পাথর উত্তোলন করছে এই বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে।
তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তারা খবর পেয়ে কামাল হোসেনের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। পরে তাকে পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তারা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখেছেন।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ বলেন, কোয়ারী তৈরী করে কিছুতেই পাথর উত্তোলন করা যাবে না। যদি কেউ করে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের পক্ষের কেউ কেউ বলেছেন, ঐ গণমাধ্যম কর্মী তাদের কাছে টাকা-পয়সা চেয়েছিলেন বলে তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, যারা এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের কাছে গিয়ে এই গণমাধ্যম কর্মী টাকা চাওয়ার সাহসই পাবেন না।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকাল সোয়া পাঁচ টা) এ ব্যাপারে থানায় কোন মামলা হয় নি। কেউ গ্রেপ্তারও হয় নি। আহত সাংবাদিকের মানিবেগ, মোটর সাইকেল ও মোবাইল উদ্ধার হয় নি।
প্রসঙ্গত. যাদুকাটার পাড়ের ঘাগটিয়া- মানিগাঁওয়ে রাতে পাড় কেটে লাখ লাখ টাকার বালু-পাথর উত্তোলনের অভিযোগ আছে অনেকদিন ধরেই।