দিরাইয়ে রণেশ ঠাকুরের গানের ঘরে দু্র্বৃত্তদের আগুন!

স্টাফ রিপোর্টার
বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের শিষ্য বাউল রণেশ ঠাকুরের উজান ধলের বাড়ির বাউল আসর ঘর রোববার গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা জ্বালিয়ে দিয়েছে। প্রায় ৫৫ বছর বয়সি এই বাউল ও তার শিষ্য সামন্তের সকল বাদ্য যন্ত্রই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। রণেশ ঠাকুর সারাদিন কেবল হা হুতাশ করেছেন। খবর পেয়ে বিকালে দিরাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। রণেশ ঠাকুর বলেছেন, গ্রামের বা আশ পাশের কারো সঙ্গেই তার কোন শত্রুতা নেই। কারা যে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তা তিনি বুঝতেই পারছেন না। দুর্বৃত্তরা আগুন ধরানোর সময় ঘরের অন্য অংশে থাকা দুটি ভেড়াকে ছেড়ে দেয়। ভেড়া দুটি অক্ষত রয়েছে।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান, উজান ধলের রবনী মোহন চক্রবর্তী কীর্ত্তনীয়া ছিলেন। তার ছেলে রুহী ঠাকুর ও রণেশ ঠাকুর বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের অন্যতম শিষ্য বাউল। ওস্তাদ শাহ্ আব্দুল করিম ও বড় ভাই রুহী ঠাকুর মারা যাবার পর ভাটী অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে যে কজন বাউল জনপ্রিয়, এরমধ্যে অন্যতম রণেশ ঠাকুর। বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের বাড়ি’র লাগোয়া রণেশ ঠাকুরের বাড়িতে করোনা কালের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই বাউল আসর বসতো। রণেশ ঠাকুরের বসত ঘরের উল্টোদিকে তার বাউল আসর ঘর। ওখানেই তার নিজের ও শিষ্যগণের যন্ত্রপাতি থাকতো। রোববার রাত ১১ টায় পরিবারের সকলে ঘুমোতে যান। রাত ১ টার পর রণেশ ঠাকুরের বড় ভাইয়ের স্ত্রী সকলকে চিৎকার করে ডাকতে থাকেন। অন্যরা ঘুম থেকে ওঠে দেখেন আসর ঘর পুড়ে যাচ্ছে। পরে আশপাশের লোকজন চেষ্টা করে আগুন নেভালেও পুরো ঘরই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের ছেলে নূর জালাল জানান, রাত প্রায় দেড় টায় চিৎকার শুনে তিনি এগিয়ে গিয়ে দেখেন বাউল রণেশ ঠাকুরের আসর ঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ¦লছে। রণেশ ঠাকুর কান্নাকাটি করছেন। পরে সকলের চেষ্টায় আগুন নেভালেও রণেশ ঠাকুরের প্রায় চল্লিশ বছরের সাধনার সকল যন্ত্রপাতি, গানের বই-পত্র পুড়ে ছাই হয়েছে।
গ্রামের তরুণ দোলন চৌধুরী বলেন, ঢোল, ছইট্টা, দোতরা, বেহালা, হারমুনিয়ামসহ নানা যন্ত্র। যা কয়েক যুগে বানিয়ে ছিলেন রণেশ ঠাকুরের পরিবার। সবই পুড়ে ছাই হয়েছে।
বিকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দিরাই থানার সাব ইন্সপেক্টর জহিরুল ইসলাম জানালেন, রাত ১ টার পর আগুন লাগানোর ঘটনাটি ঘটেছে। ঘরের একপাশে আলাদা কক্ষে দুটো ভেড়া ছিল। এগুলো বের করে দিয়ে আগুন ধরানো হয়েছে। বাউলের যন্ত্রপাতি সব পুড়ে গেছে। ঘরটিও ছাই হয়ে গেছে। রণেশ ঠাকুরকে একা নিয়ে জিজ্ঞেস করেছি, তিনি কাউকে সন্দেহ করতে পারছেন না। আমাদের ধারণা যারাই ঘটিয়েছে আশপাশের মানুষ তাতে জড়িত রয়েছে। এই সময়ে দূর থেকে এসে এমন কাজ করা কঠিন। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি।