দিরাই আ’লীগের সম্মেলনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ কেন্দ্রীয় নেতাসহ আহত অর্ধশতাধিক

 

নিজস্ব প্রতিবেদক, দিশাডটকমঃ  সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিবাদমান দুগ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতাসহ অর্ধশতাধিক নেতা কর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তির নাম আজমল হোসেন চৌধুরী আরমান (৩৫) সে উপজেলার কুলঞ্জ গ্রামের আব্দুল হান্নান চৌধুরীর ছেলে। সোমবার দুপুর ১ টায় দিরাই বি এ ডি সি মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি- বার্ষিকী সম্মেলনস্থলে সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় গ্রুপ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়া গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষ টি হয়। সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদের সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, জেলা কমিটির সহ সভাপতি খায়রুল কবির রুমেন,যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক কামরুল ইসলাম, জেলা নেতা আসাদুজ্জামান সেন্টু, দিরাই পৌরসভার মেয়র বিশ্বজিত রায়, সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়া, আওয়ামীলীগ নেতা সুজাত আহমেদ চৌধুরী,মুহিবুর রহমান মানিক এমপির পিএস রশিদ আহমেদ,উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায়, কাউন্সিলর এবিএম মাসুম প্রদীপ, জামালগঞ্জ থানার পুলিশ সদস্য তৈয়ব আলী,গুরুতর আহত হন।আরো আহত হয়েছেন,সুনামগঞ্জের এড. হাসান সাদি,আবুল আজাদ, মুহিবুর রহমান,
এছাড়াও দুই গ্রুপের অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী আহত হন। তারা হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিক মিয়া, দিগেন্দ্র লাল,সৈয়দ তালেব,আশিকুর রহমান, মতিউর রহমান, বাবুল মিয়া,নাজিম উদ্দিন,মহন মিয়া, মহিলা মেম্বার নিয়াশা তালুকদার, আব্দুল ওয়াহাব, সাগর মিয়া,টুনু মিয়া,সাজু তালুকদার, হেলাল মেম্বার, মিল্টন রায়,নজরুল ইসলাম, ইমরান হোসাইন, জাহিদুল হাসান প্রমুখ। আহতরা দিরাই উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। সংঘর্ষের বিষয়ে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে দায়ী করছেন। এদিকে সম্মেলনে শুরুতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকলেও সংঘর্ষ চলাকালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরব ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান। সম্মেলন ঘিরে দু’পক্ষের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সংঘর্ষ হতে পারে এমন খবরে আগে থেকেই সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে চার প্লাটুন পুলিশ ও ডিবির লোক উপস্থিত ছিল।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায় দুপুর ১২ টায় বিএডিসি মাঠে আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরু হয়। সাড়ে বারটার পর প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির অতিথিরা মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। বেলা ১ টায় সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়া ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায় মিছিল সহকারে সম্মেলনস্থলে আসেন।এসময় মোশাররফ মিয়া ও রঞ্জন কুমার রায় মঞ্চ উঠতে চাই লে বাঁধার সম্মুখীন হন। এর মধ্যেই দুই গ্রুপের লোকজন সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দুপক্ষের সংঘর্ষে সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক এমপি,কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুস সামাদ ডনসহ অর্ধশতাধিক নেতা কর্মী আহত হন। নিহত আরমানের সাথে থাকা প্রবাল নামে তার এক বন্ধু জানায় আমরা মারামারি চলাকালে মাঠে ছিলাম,হঠাৎ করে আরমান জানায় তার পিঠে ঢিল পরেছে সে শ্বাস নিতে পারছেনা। পরে তাকে হাসপাতালে নিতে গিয়ে জরুরি বিভাগে ভীড় থাকায় বাসা নিয়ে যাই,কিছু সময় পর সে অজ্ঞান হয়ে পরে।হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রায়হান উদ্দিন বলেন, আরমান হাসপাতালে আসার আগেই মারা গেছে।
সংঘর্ষ চলাকালে মঞ্চে অবস্থানরত অতিথিরা নিজেদের বসার চেয়ারকে ঢাল বানিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করতে দেখা যায়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তৎরতায় প্রায় ত্রিশ মিনিট পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে সম্মেলন শুরু হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট সোহেল আহমেদ এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়ের সঞ্চালনায়
সম্মেলন শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, জেলা সভাপতি মতিউর রহমান, সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, শামিমা শাহরিয়ার, জেলা সেক্রেটারি এনামুল কবির ইমন। উল্লেখ্য
গেল উপজেলা নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়কে দলীয় প্রার্থীতাকে ঘিরে দিরাই উপজেলায় আওয়ামী লীগে বিভক্তি তৈরি হয়েছে।
সংগঠনের একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়। অন্য গ্রুপে রয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র মোশারফ মিয়া। সম্মেলন সফল করতে দুই গ্রুপের তৎপর অবস্থানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান ছিল। সম্মেলনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদের নেতৃত্বে চার প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন ছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।

দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল আলম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শাস্ত রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন।

এদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া দাবি করেছেন, ‘নিহত আজমল হোসেন চৌধুরী তার কর্মী। সংঘর্ষের সময় তার সামনে প্রতিপক্ষের ইটের আঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর আজমলের মৃত্যু হয়েছে’। অপরপক্ষ এটাকে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ বলে দাবি করছে।