দিরাই উপজেলা আ’লীগের সম্মেলন কাল বিবাদমান দুগ্রুপে উত্তজনা! 

 

দিরাই প্রতিনিধিঃ- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুনামগঞ্জ জেলা শাখা ঘোষিত সিডিউল অনুযায়ী ১০ উপজেলায় আগামী কাল সোমবার থেকে উপজেেলা সম্মেলন শুরু হচ্ছে। প্রথমেই হবে দিরাই উপজেলা দিরাই আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলন ঘিরে বিবদমান দুইটি গ্রুপই নিজেদের শক্তির জানান দিতে ব্যাপক লোক জমায়েত করার চেষ্টা করছে। সরকারী দলের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ পেতেও মরিয়া দুই গ্রুপের শীর্ষ নেতারা।
প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও গ্রুপিংয়ের কারনে সম্প্রতি সে অবস্থা নেই। গেল উপজেলা নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়কে দলীয় প্রার্থীতাকে ঘিরে দিরাই উপজেলায় আওয়ামী লীগে বিভক্তি তৈরি হয়েছে।
সংগঠনের একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়। অন্য গ্রুপে রয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র মোশারফ মিয়া। এদিকে সম্মেলন সফল করতে দুই গ্রুপের তৎপর অবস্থানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান রয়েছে। সম্মেলনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি- বার্ষিক সম্মেলন এটি। হঠাৎ করে দুই সপ্তাহ আগে জেলা শাখা থেকে উপজেলা কমিটির সম্মেলনের সিডিউল প্রকাশ করায় অনেকটা বেকায়দায় পরে দলীয় নেতা কর্মীরা। বিধি মোতাবেক ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সম্মেলন না করে উপজেলা কমিটির সম্মেলনে কাউন্সিলর নির্ধারণ করাটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার তাদের জন্য। তাছাড়া বিবাদমান দুটি গ্রুপেই ইউনিয়ন আওয়ামিলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বিভক্ত হয়ে পরেছে। সর্বশেষ গেল জেলা পরিষদের নির্বাচনে দুই গ্রুপের আলাদা আলাদা অবস্থান পরিলক্ষিত হয়। প্রদীপ রায় গ্রুপ অবস্থান নেয় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে আর মোশাররফ মিয়ার গ্রুপ অবস্থান নেন দলের বিদ্রোহীর প্রার্থীর পক্ষে। নিজস্ব বলয় থেকে দুই গ্রুপের শক্তি প্রদর্শন করতে দেখা যায় জেলা পরিষদের নির্বাচনের দিন ক্যাপ স্থাপন নিয়ে। এদিন একটা গ্রুপের আরেক গ্রুপের মুখোমুখি অবস্থায় অফিস স্থাপন ও মহড়ার কারনে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। দলীয় সূত্রে জানা যায় গেল উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সাবেক সভাপতি আলতাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায় দলের মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়কে নৌকা প্রতীক দেওয়া হলে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করলে তিনজনই পরাজিত হন।নির্বাচনে বিজয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর আলম চৌধুরী। গেল পৌর নির্বাচনে একই ভাবে প্রদীপ রায়ের ভাই বিশ্বজিৎ রায় দলের মনোনীত প্রার্থী হলে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন মেয়র মোশাররফ মিয়া।
মূলত এর পর থেকেই দিরাই আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের কার্যক্রম দেখা যায়। আলাদা কর্মসূচি পালন করেন তারা।
সম্প্রতি দিরাই উপজেলা কমিটির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হলে দুই গ্রুপের মহড়া দিতে দেখা যায়। প্রদীপ রায় গ্রুপ সম্মেলন বাস্তবায়নের জন্য দিরাই বি এ ডি সি মাঠে সম্মেলনস্থল নির্ধারণ করে স্টেজ নির্মাণ করছেন। গত বৃহস্পতিবার লন্ডনে সংক্ষিপ্ত সফর শেষে মোশাররফ মিয়া দেশে ফিরলে কয়েকশ মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিয়ে বি এ ডি সি মাঠে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সোমবারের সম্মেলন বাস্তবায়নের জন্য তার বলয়ের নেতাকর্মীদের আহবান জানান।

জানা যায়,উপজেলা সম্মেলনের আগে এই উপজেলার কোন ইউনিয়নেই সম্মেলনও করা সম্ভব হয় নি। উপজেলা সম্মেলন দুটি পর্বে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটি। প্রথম পর্বে উদ্বোধন ও সমাবেশ। দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিল অধিবেশন। এক্ষেত্রে কাউন্সিলর কিভাবে তৈরি হবে সেটি নিয়েও রয়েছে ভিন্নমত।
সম্মেলনে দুই গ্রুপই গণজমায়েত করার চেষ্টা করছে। নতুন কমিটিতে পদ পেতেও মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন দুই বলয়ের নেতারা।
সাবেক পৌর মেয়র মোশারফ মিয়াকে দিরাই পৌরসভার বিগত পৌর নির্বাচনের তিন দিন আগে (২০ ডিসেম্বর ২০২০) সংগঠন থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দেয়া হয় । মোশাররফ মিয়ার দাবি, পদ থেকে মৌখিকভাবে অব্যাহতি দেওয়া দেওয়া হয়েছিল তাকে। এই সংক্রান্ত কোন চিঠিও তিনি পান নি। কাউন্সিলে অবশ্যই তিনি থাকবেন। দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসাবে পৌর নির্বাচনের পরেও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির উপস্থিতিতেই একটি সভায় তিনি উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করেন। দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় বললেন, মোশারফ মিয়াকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল জানি আমি। এখন তার বিষয়ে কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলরাই সিদ্ধান্ত দেবেন। কাউন্সিলর নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বললেন, যেহেতু ইউনিয়ন সম্মেলন হয় নি। কাউন্সিলর নির্ধারণ করা কঠিন হবে। কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের নির্দেশনায় কাউন্সিলর তৈরির চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।
সম্মেলনে সভাপতি পদে আগ্রহীরা হলেন আলতাব উদ্দিন, অ্যাড. সুহেল আহমদ, সিরাজ উদ দৌলা তালুকদার, মোশারফ মিয়া। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রদীপ রায়,অভিরাম তালুকদার, রঞ্জন কুমার রায়।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, মোশাররফ মিয়াকে বহিস্কার করার কোন চিঠি জেলা বা কেন্দ্রকে দেওয়া হয় নি। বহিস্কারের প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হয় নি। এই বিষয়টি সমাধান না হলে, দুই পক্ষই কাউন্সিলর দিতে চাইবে। এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।