দিরাই-শাল্লা সড়ক, চালুর আগেই নির্মিত ৪ কালভার্ট ভাঙার নির্দেশ

 

বিশেষ প্রতিনিধি
সড়ক চালু হবার আগেই ৯২ কোটি টাকার সড়কে রচার কালভার্ট ব্যবহার উপযোগি হয়ে গেছে। এই চার কালভার্ট নতুনভাবে নির্মাণসহ দিরাই-শাল্লা সড়কে আরও নতুন কিছু কাজের প্রস্তাবনা সংযুক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। গত ১৮ মে এবং ১৯ জুন দিরাই-শাল্লা সড়ক সরেজমিনে পরিদর্শন করে এসব প্রস্তাবনা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, দিরাই-শাল্লা সড়কের কাজ চলমান রয়েছেন, সাধারণের দৃশ্যমাণ কাজ শুরু না হওয়ায় কাজের গতি বুঝা যাচ্ছে না।
হাওরের তলানির উপজেলা শাল্লা’র প্রায় দুই লাখ মানুষ একযুগ আগে স্বপ্ন দেখেছিলেন সারাদেশের সঙ্গে সড়কে সংযুক্ত হবেন তারা। ২০১১ সালে সড়কের কাজও শুরু হয়েছিল। ২০১৭ সালে শেষ হবার কথা ছিল সড়কের কাজ। প্রধানমন্ত্রী’র প্রতিশ্রুত এই সড়কটি’র এখনো বেহাল অবস্থা। এই সড়কের কাজের ৯২ কোটি টাকার বিলও উত্তোলন হয়েছিল। কিন্তু সড়কটি যান ও জন চলাচলের উপযুক্ত হয় নি। এই সড়কের অনেক অংশ হাওরের আফালের ঢেউয়ে বিলীন হয়ে গেছে। সড়কের টেলিফোন বাজারের পাশে দুটি, সুখলাইন ও আঙ্গাউড়া-নোয়াগাঁও’এর পাশে আরও একটি করে বড় কালভার্ট ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সড়ক ব্যবহার করার আগেই এই কালভার্টগুলোর এমন অবস্থা।
বছর খানেক আগে সড়কটি যান ও জন চলাচলের উপযোগী করার জন্য আবারও প্রায় সাড়ে ৫ শ’ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা স্থানীয় সড়ক বিভাগ, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও এখনো প্রকল্পটি অনুমোদন হয় নি।
গত ১৮ মে এবং ১৯ জুন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ডিজাইন ইউনিট, পরিকল্পনা ইউনিট, সড়ক নিরাপত্তা ও ডিজাইন ইউনিট এবং ব্রিজ ও কালভার্ট ইউনিট সরেজমিনে সড়ক দেখতে যান। এসময় সড়কের ৪ টি কালভার্ট ব্যবহার উপযোগী নয় দেখে এগুলো ভেঙে নতুনভাবে ডিজাইন করে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শাল্লার আনন্দপুর গ্রামের বিকাশ চক্রবর্তী বললেন, কালভার্টগুলো নির্মাণ করার সময় গ্রামবাসী বলেছিল, এখানে এভাবে কালভার্ট করা হলে ঠিকবে না, তারা আমাদের কথা আমলে নেয় নি।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী’র প্রতিশ্রুত এই প্রকল্পে ২০১০ সালের শেষের দিকেই বরাদ্দ হয় ১১৯ কোটি টাকা। ২০১১ সালে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে সড়কে কাজ শুরু হয়। সড়কের কাজ শেষ হতে না হতেই অনেক স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। সড়কের স্লোপ ঠিকভাবে না হওয়ায় বেশিরভাগ অংশ সরু হয়ে গেছে। হাওরের ঢেউ থেকে সড়ক রক্ষা করার জন্য দেওয়া ব্লক অনেক স্থানেই ছুটে গেছে। সড়কের ছোট ছোট ৩ টি সেতুতে অ্যাপ্রোচ সড়ক নেই। ১৭ টি কালভার্ট’র বেশিরভাগেরই অ্যাপ্রোচে মাটি নেই।
সড়কের সেতু এবং কালভার্ট করা নিয়েও স্থানীয়দের সঙ্গে সড়ক ও জনপথ বিভাগের মতভিন্নতা রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন যেখানে সেতু বা কালভার্ট প্রয়োজন সেখানে হয় নি, আবার যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানে সেতু কালভার্ট হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বললেন, সড়কটির কাজ চলমান রয়েছে। এখন আবার নতুন করে অফিসিয়েল কাজ হচ্ছে। দৃশ্যমাণ কাজ শুরু না হওয়ায় অনেকে মনে করছেন কাজ হচ্ছে না। তিনি জানান, গত ১৮ মে ও ১৯ জুন একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে সড়ক ও সেতু বিভাগের ৪ বিশেষজ্ঞ ইউনিট সরেজমিনে সড়ক পরিদর্শন করেছেন। তারা ৪ টি কালভার্ট ভেঙে নতুন করে করার নির্দেশ দিয়েছেন। সড়কের প্রশস্ততা কমিয়ে ৯.৯ মিটারে আনা হয়েছে। সড়কটি হাওরাঞ্চল দিয়ে যাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে পানির প্রবাহ যেখানে রাখা প্রয়োজন সেভাবে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন নতুন করে সড়কের ডিজাইন দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী প্রাক্কলন তৈরি করে আবার প্রকল্প প্রস্তাবনা সড়ক ভবনে পাঠানো হবে। ওখান থেকে মন্ত্রণালয়ে যাবে। অনুমোদন হলে দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু হবে।