দীর্ঘ মেয়াদী বন্যার ভয়ে আশংকায় শংকিত হাওরবাসী

হিমাদ্রি শেখর ভদ্র::

দীর্ঘ মেয়াদী বন্যার ভয়ে আশংকায় শংকিত হাওরবাসী দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়,গত কয়েকদিন পানি কমলেও আজ দুপুর থেকে আবারও বেড়ে গেছে সুরমা নদীর পানি। আক্রান্ত মানুষের ঘরবাড়ি থেকে পানি কিছুটা সরে গেলেও দুপুর থেকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এজন্য স্থানীয়রা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহের পরিমাণ বেড়েছে বলে জানান। গত সোমবার ভোর ৬ টায় সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে বিপদ সীমার ৬৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলে। বিকেল থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার ভোরে ৬৫ সেন্টিমিটারে নেমে এসেছিলো। দুপুর ১২টায় ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে সুরমা নদীর পানি নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছিল । এদিকে নদীর পানি বৃদ্ধি ধীর গতিতে হলেও হাওর এলাকার পানি হুহু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের আব্দুস সালাম বলেন, গতকাল পানি কমছিলো কিন্তু আজ পানি আবারও বাড়ছে। ফলে তার ঘরের ভেতরের পানি আরও কিছুটা বেড়েছে। তাজুল ইসলাম বলেন পানি কমে আর বাড়ে। মেঘ হইলে পানি বাড়ে না হাইলে কমে। তবে এখনো বাড়ি থেকে পানি সরে যায়নি। মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের গুয়াচূড়া গ্রামের জুবেল মিয়া বলেন, দেখার হাওরের তীরবর্র্তী গ্রাম। পানি বাড়ে কমে খুব ধীর গতিতে। ফলে মানুষজন এখনো গরুবাছুর নিয়ে বিপদে রয়েছে। অধিকাংশ কৃষকের খড়ের গাদার নিচে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে গরুর খড় নষ্ট হয়ে যাবে। আরও বৃষ্টিপাত হলে গো-খাদ্যেও সংকট সৃষ্টি হবে। ইসলামপুর গ্রামের জালাল মিয়া বলেন, এতো কম পরিমাণে পানি কমলে বন্যা দীর্ঘ মেয়াদী হবে। হাওর এলাকার মানুষ এমনিতে কাজকর্ম বিহীন দিন কাটাচ্ছেন। খারাপ আবহওয়ার কারণে কেউ কাজে যেতে পারছেন না। ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের সুখাইড় গ্রামের সদানন্দ দাস বলেন দুর্যোগপূর্ন আবহওয়ার কারণে কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। অনেকটা ঘরে শুয়ে বসে দিনকাটাচ্ছেন তারা। ইসলামপুর গ্রামের রুহেনা বেগম বলেন, চারটি ভেড়া আছে। বন্যার আগে এগুলোর সড়কে ঘাস খেতো। এখন বন্যার ফলে ওয়েজখালী বাজার থেকে প্রতিদিন একটি কাঠাল কিনে এনে ভেড়া গুলোকে খাওয়াচ্ছেন। মফিকুল ইসলাম বলেন, হাওরে বেশি পানি থাকায় জালে মাছ লাগে না। সারাদিন জাল দিয়ে মাছ ধরে দুইশো টাকাও রোজগার করা সম্ভব হয় না। এদিকে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডেও নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়ে যাচ্ছে। সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে সুনামগঞ্জের পানি বাড়ছে। বৃষ্টিপাত না কমলে পানি কমার কোন সম্ভাবনা নেই। এখনো মানুষের বাড়িঘর ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি রয়ে গেছে। জেলা প্রশাসনে হিসেব মতে গতকাল পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার লোক পানি বন্দি অবস্থায় রয়েছেন, দুর্গতদের মধ্যে নগদ ৯ লাখ টাকা, ৬৮৫ টন চাল ও ৭৮৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মোঃ ফজলুল হক বলেন, সুরমা নদীর পানি বৃষ্টি না হলে কমছে বাড়ছে আবার বৃষ্টি হলে বাড়ছে। দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ অব্যহত রয়েছে। মন্ত্রণালয়ে আরো বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।