নিয়ম-নীতির বালাই নেই সিলেট কওমী মাদরাসা বোর্ডে

কাউসার চৌধুরীঃ

‘আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশ’ নিয়ম-নীতি অনুসারে পরিচালিত সুশৃঙ্খল একটি বোর্ড। কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সংবিধানের শুরুতেই এমন কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে পাওয়া গেছে এর উল্টো চিত্র। সিলেট অঞ্চল ভিত্তিক এই বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা সরাসরি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত। অভিযোগ রয়েছে, বোর্ডের গেল নির্বাচনে ঘটেছে জাল-জালিয়াতির ঘটনা। আছে অনিয়মের অভিযোগও। জামেয়া ক্বাসিমুল উলুম দরগাহ শাহজালাল (রহ.) মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ীসহ কয়েকজন শীর্ষ আলেম বোর্ডের সুনির্দিষ্ট নানা অনিয়ম তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সংবিধান সম্মতভাবে বোর্ড পরিচালনার দাবীতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে অধিকাংশ মাদ্রাসা।

বোর্ডের সভাপতি মাওলানা জিয়া উদ্দিন সিলেটের ডাককে জানিয়েছেন, তিনি নিজে রাজনীতি করেন এবং একটি রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন। তবে, এদারার কোন কর্মকর্তা-কর্মচারি বা দায়িত্বশীল রাজনীতি করতে পারবেন না-এরকম কোন কিছু সংবিধানে নেই। যারা নির্বাচন করেছেন জাল-জালিয়াতির বিষয়ে তারাই বলতে পারবেন। সংবিধানের আলোকে বোর্ড পরিচালিত হচ্ছে বলে দাবি এ আলেমের।

জানা গেছে , ১৯৪১ সালে গঠিত “আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশ” নামক বোর্ডের অধীনে সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় প্রায় ৭৯৫ টি মাদরাসায় প্রায় ৫০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। বোর্ড পরিচালনার জন্যে রয়েছে মুদ্রিত সংবিধান। সংবিধানের ধারা-৫ এর আদর্শ-উদ্দেশ্যে (ঘ) বলা হয়েছে, ‘আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশ’ একমাত্র শিক্ষা-বিষয়ক প্রতিষ্ঠান বিধায় কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সহিত এই বোর্ডের সম্পর্ক থাকিবে না”। সংবিধানে এমন বিধান থাকলেও বোর্ডের বর্তমান সভাপতি মাওলানা জিয়া উদ্দিন একই সাথে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন। বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল বছিরও একই সাথে দলটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। হেফাজতের নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ের পর বিএনপি জোটের অন্যতম শরীক এ দলটি কিছু দিন আগে বিএনপি জোট থেকে বের হয়ে যায়।
বোর্ডের বিগত নির্বাচন পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে শুরা গঠন ও অন্যান্য কার্যক্রমে নিজস্ব সংবিধান লঙ্ঘন ও অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বোর্ডের মহাসচিবের কাছে ১০ পৃষ্ঠার দাখিল করা অভিযোগে নানা অনিয়মের বর্ণনা ছাড়াও গেল নির্বাচনের জাল-জালিয়াতির বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। সংবিধান লঙ্ঘন করে বোর্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন রাজনৈতিক দলের পদবীধারী শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ তাদের পছন্দের মাওলানা ইউসুফ খাদিমানী, হাফিজ মাওলানা ফখরুজ্জামান ও মাওলানা তৈয়বুর রহমান চৌধুরীকে বোর্ডে পুনর্বাসনে মরিয়া হয়ে উঠেন। অথচ এই তিনজনের বিরুদ্ধে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগে বলা হয় , রামধা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা ইউসুফ খাদিমানী বোর্ডের অডিটর হওয়ায় তিনি নিজে অডিট না করে নিজের স্বাক্ষর অন্য ব্যক্তিকে দিয়ে জালিয়াতি করে অডিট করান। কিছু দিন পূর্বে তার মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা রুহুল আমিন জাক্কারকে দিয়ে সিলেট নগরীর বাদামবাগিচা মাদরাসা অডিট করান। বোর্ডের অভ্যন্তরীণ অডিট কাজ শেষ করে অডিটের গুরুত্বপূর্ণ খাতা তার নিজের মাদরাসায় নিয়ে যান। বিভিন্ন মাদরাসা ও বোর্ডের অডিটের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। গেল নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সাব-কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। নির্বাচনের পূর্বে এক প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজও করেন। নির্বাচনের দিন জাল ভোটদানে তিনি সহযোগিতাও করেন। মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরান নামের এক ব্যক্তি ভোটার না থাকার পরও তাকে ইউসুফ খাদিমানী ব্যালট পেপার সরবরাহ করেন।

এ সকল ব্যাপারে মাওলানা ইউসুফ খাদিমানী বলেছেন , সকল অভিযোগের ব্যাপারে বোর্ডের মহাসচিব বরাবরে লিখিত জবাব দিয়েছেন। মহাসচিবের সাথে কথা বললে বিস্তারিত জানা যাবে। জাল ভোটের ব্যাপারে মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরান বলেন , এটা তো অনেক আগের ঘটনা। ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল এবং এটি সে সময়ই শেষ করা হয়েছে।

সিলেট শহরতলীর বড়শালার জামিয়া ইসলামিয়া ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম ও সভাপতি হলেন হাফিজ মাওলানা ফখরুজ্জামান। সংবিধানের ধারা ১৬-১ এর বিধানমতে, অন্যকোন জাতীয় বোর্ডে তার পরিচালনাধীন মাদরাসা ও তিনি অন্তর্ভুক্ত হলে তিনি এদারার শুরা, আমেলা এবং কর্মকর্তা হতে পারবেন না। কিন্তু এই মাদরাসা দীর্ঘদিন ধরে বেফাকের অন্তর্ভুক্ত। ফরিদাবাদ মাদরাসার বেফাকের রেজিষ্ট্রেশন নম্বর (ইলহাক নম্বর) ৭/৮৯০। তিনি এদারার কর্মকর্তা হতে নানা কৌশলের আশ্রয় নেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং সভাপতিও। বোর্ডের রচনা কমিটির দায়িত্ব থাকাকালে রেজুলেশনকে পাশ কাটিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নুরানী বই প্রণয়ন করেন। রচনায় ভুল হওয়ায় ছাপানোর পর ২১ টি বই বাতিল করা হয়। পরে সংশোধন করে পুনরায় নতুন করে বই ছাপানো হয়। এতে বোর্ডের প্রায় ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। গেল শিক্ষা বছরের ক্যালেন্ডার ও সিলেবাস বারবার ভুল ছাপিয়ে বোর্ডের সাধারণ সম্পাদকের প্রশ্রয়ে অনেক অর্থ নষ্ট করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

হাফিজ মাওলানা ফখরুজ্জামান অভিযোগের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি বলেন, যারা অভিযোগ করেছেন তাদের কাছে জিজ্ঞেস করুন। অথবা বোর্ডের সভাপতি ও মহাসচিবের সাথে কথা বলতে পারেন।

গেল বছর দক্ষিণ সুনামগঞ্জের শাখাইতি মাদরাসার প্রতিনিধি হিসেবে মাওলানা তৈয়বুর রহমান চৌধুরী পদাধিকার বলে শুরা ও পরে আমেলার সদস্য হন। চলতি বছর এই সুযোগ না পেয়ে তিনি মুরাদপুর মাদরাসার সহকারী মুহতামিম পদ নিয়ে এদারায় আবেদন করেন এবং কৌশলে পরবর্তীতে দু’কমিটিতেই স্থান করে নেন। অথচ মুরাদপুর মাদরাসার শিক্ষক হাজিরা খাতা ও ক্লাস রুটিনে তার নাম নেই। সংবিধান অনুযায়ী সহকারী মুহতামিমের কাজই হচ্ছে মুহতামিমকে সহযোগিতা করা। জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি এ কাজটি করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। মজলিসে শুরা কমিটি গঠনের জন্যে ১১ জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সংবিধানের ধারা নং ১০ এর ‘চ’ অনুযায়ী সকল উপজেলা -থানা ভিত্তিক সদস্য মনোনয়ন করা হয়। কিন্তু বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল বছির ও তৈয়বুর রহমান চৌধুরী মিলে সুনামগঞ্জের ১০ টি অঞ্চলের মধ্যে ৭ টি অঞ্চলকে ওই কমিটি থেকে বঞ্চিত করেন।

মাওলানা তৈয়বুর রহমান চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, সংবিধানের আলোকেই বোর্ড পরিচালিত হয়। তারা বেশ আগে অভিযোগ করেছিলেন। লকডাউনের পর বসে মজলিসে শুরা ও আমেলা এগুলো নিষ্পত্তি করেছেন। মূলত নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এসব করা হচ্ছে।

জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার, ছাতক, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা উপজেলা থেকে বোর্ডের কমিটিতে প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তিতে ব্যাপক অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ সম্পাদক তার পুত্র মাওলানা মিসবাহ উদ্দিনকে সংবিধান বহির্ভূতভাবে কমিটিতে স্থান দেন। সংবিধান অনুযায়ী, অন্যকোন জাতীয় বোর্ডে তার পরিচালনাধীন মাদরাসা ও তিনি অন্তর্ভুক্ত হলে তিনি এদারার শুরা, আমেলা এবং কর্মকর্তা হতে পারবেন না। বোর্ডের সভাপতি মাওলানা জিয়া উদ্দিন নগরীর শিবগঞ্জ মাদরাসারও মুহতামিম। অথচ শিবগঞ্জ মাদরাসা বেফাকের অন্তর্ভুক্ত মাদরাসা। যার বেফাকের রেজিষ্ট্রেশন নম্বর (ইলহাক নম্বর) ৭/১০৬৭।

দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্স ডিগ্রীর সমমান প্রদান করতে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর সিনিয়র সচিব ড. মো.আবদুর রব হাওলাদার স্বাক্ষরিত গেজেট প্রকাশ করে সরকার। গেজেট অনুযায়ী যে ৬ টি বোর্ড নিয়ে ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়া’তিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ নামক বোর্ড গঠন করা হয় তার মধ্যে ৪র্থ হচ্ছে সিলেটের আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশ। আইনটির ৬ নম্বর ক্রমিকে আল-হাইআতুলের কমিটি গঠনের ব্যাপারে (চ) বলা হয়েছে, “আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশ এর ২ (দুই) জন সদস্য (পদাধিকার বলে সভাপতি ও মহাসচিব অথবা বোর্ড কর্তৃক মনোনীত)। কিন্তু বোর্ডের সভাপতি বয়সের ভারে ঢাকায় আল-হাইআতুলের সভায় অংশ গ্রহণ করতে পারেন না। সভাপতির পরিবর্তে সিনিয়র সহ-সভাপতি কিংবা সহ-সভাপতি এবং মহাসচিব ওই সভায় অংশ গ্রহণ করবেন, নতুবা বোর্ড কর্তৃক মনোনীত ২ জন অংশ গ্রহণের বিধান থাকলেও ওই সভাসমূহে বহরগ্রাম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা এনামুল হক অংশ নেন। এর ফলে সরকারের আইনেরও সরাসরি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত ৩০ আগস্ট ঢাকায় আল-হাইআতুলের সভায় মাওলানা এনামুল হক অংশ গ্রহণ করেন। সভায় অংশ গ্রহণকারীদেরকে যাতায়াত ভাতা হিসেবে সম্মানী প্রদান করে আল-হাইআতুল উলয়া। এ বিষয়ে মাওলানা এনামুল হক বলেন, বোর্ডের সভাপতির প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে পাঠানো হয়। এটা স্থায়ী নয়। অন্য বোর্ডের সভাপতিরাও এরকম প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন।

৮০ বছরের পুরনো এই শিক্ষা বোর্ডের এ সকল অনিয়ম তুলে ধরে এবং অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে গত ৯ মে লিখিত অভিযোগ করা হয়। সিলেটের মাদরাসাগুলোর পক্ষে শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী, কৌড়িয়া মাদরাসার মুহতামিম হাফিজ মাওলানা মুহসিন আহমদ ও সোবহানীঘাট মাদরাসার মুহতামিম হাফিজ মাওলানা আহমদ কবীর স্বাক্ষরিত অভিযোগটি দায়েরের ৪ মাস অতিবাহিত হলেও এ বিষয়ে আজো কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর ফলে সংশ্লিষ্ট মাদরাসাগুলোর মুহতামিমসহ আলেমদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিক্ষুদ্ধ আলেমগণ করণীয় ঠিক করতে সিলেট -সুনামগঞ্জে দফায় দফায় বৈঠক করেন। বিশেষ করে সুনামগঞ্জের প্রায় সকল কওমী মাদরাসায় এ নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

এদারার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী মাদরাসাগুলোর পক্ষে জামেয়া ক্বাসিমুল উলুম দরগাহ শাহজালাল (রহ.) এর মুহতামিম মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী বলেন, আমরা তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলাম। ৪/৫ মাসেও অভিযোগের ব্যাপারে কোন প্রতিকার পাইনি। বর্তমানে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। আমাদের মুরুব্বীদের তৈরী এদারাকে রক্ষায় আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি সাংবিধানিকভাবেই পরিচালিত হোক।

বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল বছির সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেটের ডাককে জানিয়েছেন, সংবিধানে আছে বোর্ড রাজনীতিমুক্ত থাকবে। আমরা ৬ জন মিলে সংবিধান সংশোধন করেছি। আগের সংবিধান সংশোধন হয়েছে। এরপর নির্বাচন হল, কারো কোনো আপত্তি নেই। যারা অভিযোগ করেছেন তারাও ছিলেন। সকলের উপস্থিতিতে মজলিসে শুরা ও আমেলা সিদ্ধান্ত দিয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী মজলিসের শুরা গঠনের জন্য ১১ সদস্য বিশিষ্ট সাব-কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সকল সদস্যের উপস্থিতিতে এবং তাদের স্বাক্ষরিত ১২৫ জন বিশিষ্ট শুরা গঠন করা হয়। বিষয়গুলোর নিষ্পত্তির পর এখন তারা মানছেন না। নতুন করে আবারও আপত্তি করছেন বলে জানান তিনি।