পৌনে ৭ লাখ কৃষক পাবেন ৮১ কোটি টাকার প্রণোদনা

উৎপাদন বাড়াতে ৯টি ফসলে সারাদেশে ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭০০ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে ৮০ কোটি ৭৬ লাখ ৯১ হাজার ৮০০ টাকার প্রণোদনা দেবে সরকার।

প্রণোদনা হিসেবে কৃষকরা চলতি রবি মৌসুমে গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম, শীতকালীন মুগ, পেঁয়াজ এবং পরবর্তী খরিপ-১ মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন মুগ ও গ্রীষ্মকালীন তিল উৎপাদনে বীজ ও রাসায়নিক সার (ডিএপি ও এমওপি) পাবেন।

বুধবার (৩০ অক্টোবর) সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রণোদনা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি জানান, রবি মৌসুমে গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম, শীতকালীন মুগ, পেঁয়াজ এবং পরবর্তী খরিপ-১ মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন মুগ ও গ্রীষ্মকালীন তিল উৎপাদন বৃদ্ধিতে ৬৪টি জেলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে পরিবার প্রতি সর্বোচ্চ এক বিঘা জমির জন্য বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার প্রণোদনা হিসেবে দেয়া হবে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘গমের ক্ষেত্রে উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা ৭৫ হাজার, ভুট্টার ক্ষেত্রে ২ লাখ ৫০ হাজার, সরিষার ক্ষেত্রে ২ লাখ ৪০ হাজার, চীনাবাদামের ক্ষেত্রে ১০ হাজার, গ্রীষ্মকালীন তিলের ক্ষেত্রে ২৫ হাজার, শীতকালীন মুগের ক্ষেত্রে ৪৫ হাজার ৩০০, গ্রীষ্মকালীম মুগের ক্ষেত্রে ৩০ হাজার, পেঁয়াজ চাষে উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা ৭ হাজার ৭০০ জন।’

মন্ত্রী আরও জানান, এক বিঘা জমির জন্য গমের ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ২০ কেজি বীজ, ভুট্টার ক্ষেত্রে ২ কেজি বীজ ও সরিষার ক্ষেত্রে এক কেজি বীজ, চীনাবাদামের ক্ষেত্রে ১০ কেজি বীজ, গ্রীষ্মকালীন তিলের ক্ষেত্রে এক কেজি বীজ, গ্রীষ্মকালীন মুগের ক্ষেত্রে ৫ কেজি বীজ ও পেঁয়াজের ক্ষেত্রে এক কেজি বীজ কৃষককে দেয়া হবে।

গম, ভুট্টা, গ্রীষ্মকালীন তিল, সূর্যমুখী, সরিষা ও পেয়াজের ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার পাবেন। চীনাবাদামের প্রত্যেক কৃষক ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি শীতকালীন মুগের ক্ষেত্রে ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার প্রণোদনা হিসেবে পাবেন বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এ প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭০০ বিঘা জমি চাষ করা সম্ভব হবে। এতে প্রায় ৮৪০ কোটি ২৯ লাখ ৩৪ হাজার ২৯১ টাকা আয় হবে এবং প্রাক্কলিত ব্যয় হবে ৪৫৯ কোটি ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৬১ টাকা।’

এতে এক টাকা খরচ করে এক টাকা ৮৩ পয়সা আয় হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এছাড়া প্রণোদনার আওতায় চাষীদের কাছে উৎপাদিত উন্নত জাতের গম, গ্রীষ্মকালীন মুগ, শীতকালীন মুগ, সরিষা, তিল, চীনাবাদাম বীজ সংরক্ষিত থাকবে যা পরবর্তী বছর সংশ্লিষ্ট চাষীসহ প্রতিবেশী চাষীরা ব্যবহার করতে পারবেন।’

কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রমের যৌক্তিকতা তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘শস্যবহমুখীকরণের মাধ্যমে দেশের মানুষের সার্বিক পুষ্টি চাহিদা মিটানো; বন্যা, জলাবদ্ধতা, ভূমিক্ষয়, অনাবৃষ্টি, খরা, লবণাক্ততা, শৈত্যপ্রবাহ, ঘনকুয়াশাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে বিভিন্ন ফসল চাষে কৃষক সমাজকে অভ্যস্ত করে তোলা; দেশের বিভিন্ন জেলায় পতিত ও সাময়িক পতিত জমি আবাদের আওতায় এনে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি করা; কৃষককে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত করে তোলা; নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি ও বিভিন্ন ফসলের উন্নত জাতের সাথে কৃষককে পরিচয় করিয়ে দেয়া; উচ্চ মূল্য ফসলের আবাদি বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি করা; সর্বোপরি লাগসই কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করে কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থা মাধ্যমে কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও সুসংহত করা।’

সংবাদ সম্মেলনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।