রক্তে লাল শিমুল বাগানে পর্যটকদের উপচে পড়া ঢল

জসিম উদ্দিন::

ফাগুণে আগুন লেগেছে শিমুল বাগানে। রক্তে লাল ফুলে ফুলে অপরূপ সাজে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে বাগানটি। রক্তে রাঙানো এ দিনটি প্রাণে প্রাণে দোল খেয়ে যায় তরুন তরুণীর বুকে। শত শত দর্শনার্থী বাসন্তী রঙে নিজেকে সাজিয়ে আগমণ ঘটে শিমুল বাগানে। ফাগুনের এ প্রথম দিনে কেউ বাউলের সুর তোলে, কেউ ছবি তোলে, কেউ আকাশ আর শিমুল ফুলে একজোড়া চোখ রেখে আবৃত্তি করে কবিতা। আউল-বাউল মন রক্তে আভা লাল পলাশের সাথে মিলেমিশে যেন একাকার হয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৩ হাজারের অধিক পর্যটকদের ঢল নামে। এমন উপচে পড়া ঢলে শিমুল বাগানতলা কানায় কানায় পূর্ণ। পর্যটকদের নিরাপত্তায় বাগানের চারদিকে দু’দিন ধরে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। নিরাপদ ও স্বস্থিতে পর্যটকরা তুরুম তারাজ আড্ডা আর নেচে গেয়ে হারিয়ে গেছে শিমুলের বনে। সাংস্কৃতিক ও কাব্যময় হয়ে উঠা দিনটি নানা রকম উৎসব নিয়ে পর্যটকরা শিমুল বাগানে যাপিত করে বাসন্তী এ দিনটি। এটি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার রূপবতী যাদুকাটা নদীর তীরে অবস্থিত। একদিকে মেঘালয় পাহাড় অন্যদিকে রূপের নদী যাদুকাটা। তার পাশেই ৩ হাজার শিমুল গাছে গাছে লাল লাল ফুল ফুটেছে। ফাগুন এলেই দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী এসে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। গতকাল ফাগুনের প্রথম এ দিনে ভালবাসার হাট বসেছিল বাগানে। এছাড়া স¤প্রতি ছোট পরিসরে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে শিমুল বাগানের ভেতরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি ক্যাফেও তৈরি করা হয়েছে । যা তীব্র গরমে পর্যটক আর দর্শনার্থীদের পিপাসা নিবারণের মতই কাজে আসবে। এর নামকরণ করা হয়েছে শিমুল বাগান ক্যাফে। ২০০৩ সালের দিকে ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে বৃক্ষ প্রেমিক জয়নাল আবেদীন তিন হাজার শিমুল গাছ লাগানোর মাধ্যমে এই বাগান শুরু করেন। তিনি মারা গেলে তার ছেলেরা এ বাগানকে পরিচর্যা করে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণ করে তুলছেন। কাব্যময় এ বাগানটিতে পুরো ফালগুন জুরে ঢল নামে পর্যটকদের। গতকাল বাগানে ঘুরতে আসা শা’বির শিক্ষার্থী আয়েশা আক্তার তার মনের ভাব কবিতার পংতি দিয়ে প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, এই ফাগুনে সাঝিয়েছি অঞ্জলি, আমার হৃদয়ের থালা ভরে। দেখা হোক, আদর হোক ভালোবাসায়। দু’টি হৃদয় একটি থালায়, শিমুল ও পলাশের ফুলে ফুলে। দর্শনার্থীদের সাজগোছ ও মুখে অনাবিল হাসি দেখে মনে হয় আগুন রাঙা এ ফাগুনে প্রকৃতিতেই শুধু উচ্ছ¡াসের রঙ ছড়ায় না, রঙ ছড়ায় প্রতিটি তরুণ প্রাণে। প্রাণের টানে, আর প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে মন হয়ে ওঠে উত্তাল, বাঁধনহারা। কোকিলের কুহুতান, দখিনা হাওয়া, ঝরা পাতার শুকনো নুপুরের নিক্কন, প্রকৃতির মিলন সবই এ বসন্তেই। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত মানেই একে অপরের হাত ধরে হাঁটা। মিলনের এ ঋতু বাসন্তী রঙে সাজায় মনকে, মানুষকে করে আনমনা। এ ভাবেই কেটেছে শিমুল বাগানে বসন্তের এই প্রথম দিনটি।