সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় নির্মাণ হচ্ছে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

ডেস্ক নিউজঃ
দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে কারিগরি শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের অংশ হিসেবে উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (টিএসসি) স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন করা হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত একসাথে ১০৮০ জন শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে। ২০০ শয্যার একটি ছাত্রী হোস্টেলও থাকবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে।
প্রতিষ্ঠানগুলো স্থাপনে ব্যয় হবে ২০ হাজার ৫২৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ‘উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন’সহ (২য় পর্যায়) মোট ৮টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর।
একনেক সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান প্রকল্পের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের ১৭তম একনেক সভায় ২২ হাজার ৯৪৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্প ব্যয়ের পুরো অর্থ বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ব্যয় করা হবে। ৮ প্রকল্পের মধ্যে ৬টি নতুন প্রকল্প এবং বাকি দু’টি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পটি সরকারের একটি তারকা (স্টার) প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে আমরা দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে কারিগরি শিক্ষা প্রদান এবং দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
তিনি বলেন, বিদেশী শ্রমবাজারে যুব সমাজের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি এবং রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য দেশে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সফলভাবে পরিচালনার জন্য কারিগরি স্কুলের শিক্ষকদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রী আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কারিগরি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শিক্ষকের অভাব আছে। প্রয়োজন হলে প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষকদের বিদেশ পাঠাতে হবে। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন তৈরি এবং যন্ত্রপাতি, চেয়ার-টেবিলসহ আনুষঙ্গিক উপকরণ প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের এই মেগা প্রকল্প একনেকে পাস হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও একনেকের সদস্যদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে শহরে আনন্দ শোভাযাত্রা করেছেন সুনামগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
রোববার সকালে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শহরে এই আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এ সময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. আজিজুল ইসলাম শিকদার, ফার্ম মেশিনারিজ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন, শিক্ষক মো. রজব আলী, মো. ফখরুল ইসলাম, তাহমিনা বেগম প্রমুখ।
পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ এককনেক সভার সদস্যদের প্রতি অভিনন্দন বার্তা পাঠান সুনামগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের প্রস্তাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দারিদ্র্য দূরীকরণ, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন ট্রেনিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ২০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
এ লক্ষ্য অর্জনে কারিগরি শিক্ষাকে গ্রাম পর্যায়ে সম্প্রসারিত করার জন্য কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ বিদ্যমান ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপন প্রকল্প দুটি হাতে নেয়। সেগুলো এখনও বাস্তবায়নাধীন। সেই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় পর্যায়ের ৩৮৯টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের প্রকল্প একনেকে পাস করা হয়।
২০ হাজার ৫২৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।