দিরাইয়ে সড়কবিহিন একাধিক সেতু- কাজে আসছে না এলাকাবাসীর

মো.উবাইদুল হক :- সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন অনেক সেতু নির্মাণ করা হয়েছে যেগুলোর দুই পাশে নেই সংযোগ সড়ক।  সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু গুলি কোনো কাজেই আসছে না  এলাকাবাসীর। বছরের পর বছর টায় দাড়িয়ে থাকা সংযোগ বিহীন সেতু  অব্যহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় এর আয়ুকালও কমছে। তাছাড়া  সরকারের বিপুল পরিমাণ  অর্থ ব্যয় নির্মিত একাধিক সেতু এলাকার জনসাধারনের উপকারের পরিবর্তে ভোগান্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়  এলাকাবাসীর।

গত সপ্তাহে দিরাই উপজেলার একাধিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে আলাপ কালে এমনই চিত্র  দেখা যায়।  উপজেলার  রাজানগর ইউনিয়নের ধলুয়া ও আনোয়ারপুর গ্রামের সংযোগস্থলে প্রায় এক যুগ আগে  একটি সেতু নির্মাণ  করা হলেও রাস্তার উন্নয়ন করা হয়নি। ফলে সেতু থাকলেও রাস্তা না থাকায় চলাচল করতে পারছে না এলাকাবাসী।

আনোয়ারপুর গ্রামের বাসিন্দা বিল্লাল মিয়া বলেন, ধলোয়া ও আনোয়ারপুর  গ্রামের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল।কিন্তু দুইপাশের সংযোগ  রাস্তা নির্মাণ না করেই ব্রিজ করা হয়েছে। এ জন্য মানুষের কাজে আসছে না। মানুষের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। ইসমাঈল নামের আরেক ব্যক্তি বলেন,রাস্তা নির্মাণ না হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত রোগী ও ছাত্র/ছাত্রীদের চলাচলের অনেক অসুবিধা হচ্ছে।

পাকা না হোক ইটের সলিং রাস্তা হলেও আমাদের কষ্ট কমবে।

করিমপুর  ইউনিয়নের  বদলপুর ও নাগেরগাও গ্রামের সংযোগ রক্ষা করতে খালের উপর প্রায় ১০-১১ বছর আগে নির্মাণ করা হয় একটি সেতু। এলাকাবাসী বলছেন, দুটি গ্রামের মাঝে প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক আছে। কিন্তু সড়কটি নিচু হওয়ায় প্রতিবছরই পানিতে তলিয়ে যায়। শুকনো মৌসুমেও রাস্তাটি ব্যবহার করা যায় না।

নাগেরগাঁও গ্রামের গোলাপ  মিয়া  বলেন, সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল দুটি গ্রামের স্বাভাবিক যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য। কিন্তু বর্ষাকালে সেতুর  সংযোগ সড়কে উভয় পাশের রাস্তায় ৪-৫ ফুট পানি থাকে। ব্রিজটি ব্যবহার করতে না পারায় দুই কিলোমিটারের পথ চার-পাছ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়।

কুলঞ্জ ইউনিয়নের মিলনগঞ্জ বাজার সুরাই নদীর সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মূল সেতুর ৪টি পিলারের মধ্যে ৩টি পিলারের কংক্রিট ধসে পড়ে কেবল রডের ওপর টায় দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। এ অবস্থায় যেকোনো মূহুর্তে ধসে পড়ার

আশংকা করছেন স্থানীয় লোকজন । সেতুটি নতুন করে নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন বহুবার এলাকাবাসী মানববন্ধন সহ স্মারকলিপি দিলেও কারো টনক নড়েনি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।একই ইউনিয়নের কুলঞ্জ  হাওরের বন্দেী ছড়া নামক স্থানে  কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু তৈরি করা হলেও জনগণের কোন কাজে আসছেনা। কারণ রাস্তার দুপাশে সংযোগ নাই, চার পায়ে দাঁড়িয়ে আছে এ সেতু।

এলাকার মানুষের দাবি সেতুটির দুপাশে মাটি ভরাট ও রাস্তা তৈরি করে জনগণের চলার উপযোগী করে তোলা হলে সেখানে মানুষ উপকার হতো।

কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরার হোসেন বলেন,মিলনগঞ্জ বাজারের পাশে সুরাই নদীর সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে  ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে আছে,আমি এনিয়ে  কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করেছি আশা করছি শীঘ্রই নতুন সেতু নির্মাণ  কাজ শুরু হবে। তাড়ল ইউনিয়ন কার্যালয়ের পাশে বরাম হাওরের দীর্ঘদিন ধরে একটি সেতু সংযোগ সড়ক বিহীন রয়েছে। কোনকালেই সেতুর ব্যবহার হয়নি।স্থানীয়রা জানান বর্ষাকালে বিভিন্ন এলাকার লোক নৌকায় এসে সেতুর উপর মদ- জুয়ার আসর বসায়।

এভাবেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পাশে একটি মহল ও সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একাধিক সেতু নির্মাণ করলেও বছরের পর বছর স্থানীয় বাসিন্দাদের কোন কাজে আসছেনা।

দিরাই উপজেলা  প্রকৌশলী মোঃ ইফতেখার হোসেন বলেন,হাওরপারে অপরিকল্পিত সেতু না করাটাই  ভালো, রাস্তা ঠিকঠাক রেখে  নির্মান করলে মানুষের উপকারে আসবে।