১৪ বছর আগে ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন। এরপর ২০১১ সালে আরেকটি কমিটি গঠন করা হলেও সেসময় হয়নি সম্মেলন। অর্থাৎ ভোটে নেতা নির্বাচনের জন্য সিলেট আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অপেক্ষা ১৪ বছর ধরে। সে অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে ৫ ডিসেম্বর। কেন্দ্রের নির্দেশনার আলোকে একই দিন সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছে মহানগর ইউনিটও। ইতোমধ্যেই সম্মেলনের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে সিলেট জেলা ইউনিটের আওতাধীন উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার ৭টি উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন পর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের সুর উঠায় কারা আসছেন নেতৃত্বে বিষয়টি উঠেছে আলোচনায়। বিশেষ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের দিকে তাকিয়ে আছেন সকলে। আসন্ন সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সভাপতি পদ নিয়ে। কারণ বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যূব্জ এবার সভাপতি পদে নতুন মুখ আসছে এটা অনেকটাই নিশ্চিত। এ পদে আলোচনায় আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সহ সভাপতি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, আশফাক আহমদ ও মাসুক উদ্দিন আহমদ। এদের মধ্যে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী সংসদ সদস্য এবং আশফাক আহমদ সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে আছেন। আর শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মাসুক উদ্দিন আহমদ ২০১৩ সালের সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েও দলের নির্দেশে তা প্রত্যাহার করায় আছেন কেন্দ্রের গুডবুকে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনেও মনোনয়ন বঞ্চিত হন তারা। তাই এই দুজনের একজন আসতে পারে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এমন আলোচনা আছে সিলেটজুড়ে। তবে সিনিয়র কোন নেতাকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হলে সাধারণ সম্পাদক পদে শফিকুর রহমান চৌধুরীকে আবারো রাখা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে নতুন মুখের আগমণ ঘটবে সাধারণ সম্পাদক পদে। এ পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি এডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদ। এছাড়াও আলোচনায় আছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, নাসির উদ্দিন খান ও উপ দফতর সম্পাদক জগলু চৌধুরী। তবে সহ সভাপতি থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়ায় শাহ ফরিদ আহমদকে নিয়ে রয়েছে গুঞ্জন।
এদিকে সম্মেলনের সুরে নেতৃত্বে আসার প্রতিযোগিতার সাথে সাথে বাদ পড়ার শঙ্কায়ও পড়েছেন বহু নেতা। বিগত দিনে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়, বিভিন্ন নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিরোধিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া আর দলের প্রার্থী বিরুদ্ধে কাজ করা সহ সভাপতি, সম্পাদকম-লীর সদস্যসহ দুই ডজন নেতা রয়েছেন এমন শঙ্কায়।
সম্মেলনের প্রস্তুতির ব্যপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী আগামী ৫ ডিসেম্বর সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ চাইলে সেটি পরিবর্তন হতে পারে। এছাড়া কমিটি না থাকা উপজেলাগুলোরও সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে সাংগঠনিক কমিটি। সুন্দরভাবে উপজেলাগুলোর সম্মেলন করে জেলার সম্মেলন আয়োজন করতে চায় জেলা আওয়ামী লীগ।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটি গঠন হয় ২০১১ সালের নভেম্বরে। সেসময় সভাপতি নির্বাচিত হন আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান আর সাধারণ সম্পাদক হন শফিকুর রহমান চৌধুরী। তখন একটি পক্ষ কমিটির বিরোধিতা করলেও পরবর্তীতে সুন্দরভাবেই পরিচালিত হচ্ছিল তাদের কার্যক্রম। কিন্তু এ কমিটির কার্যক্রমে কিছুটা স্থবিরতা আসে ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান মারা গেলে। এরপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান দায়িত্ব নিলেও রাজনীতির মাঠে মোটেও সক্রিয় হননি তিনি। ফলে পুরো জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পরে সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর কাঁধে। গত কয়েকবছর ধরে তিনিই নেতাকর্মীদের নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। দলীয় কার্যক্রম শফিক চৌধুরী চালিয়ে গেলেও ব্যর্থ হন উপজেলাগুলোর কমিটি গঠনে।