সুব্রত দাস খোকন অতিথি প্রতিবেদকঃ
৬ কেদার (২৮ শতাংশ) জমি ৯ হাজার টাকা দিয়ে বর্গা রেখেছিলাম। ধান পেয়েছি ১৩০ মন। গত বছর এই জমি করে ধান পেয়েছিলাম ৮৫ মনের মত। গত বছর ধান কাটতে কেদার প্রতি
লেগেছিল ২,০০০/- টাকা এবার কেটেছি কেদার প্রতি ১,৫০০/- টাকা দিয়ে।
আবহাওয়া ভাল থাকায় এবং ক্ষেতের তলা শুকনো থাকায় এ বৎসর ধান কাটার দাম কম।
নগদ টাকা ছাড়া কেউ ধান কাটে না তাই মন প্রতি ৫০০ টাকা করে ধান বিক্রি করে শ্রমিকের মজুরী দিতে হয়েছে। এ বৎসর সবদিক দিয়াই ভালা, ধানের ফলনও বাম্পার হয়েছে। শুধুমাত্র ধানের দামটা যদি একটু বেশি হত তাহলে সারা বছর খেয়ে-দেয়েও কিছুটা আয়ের মুখ দেখতে পারতাম।
উপরের কথাগুলো বলেছিলেন শাল্লা উপজেলার বাহাড়া গ্রামের বর্গাচাষী জহরলাল দাস (৪৫)। বিগত ২দিন শাল্লা উপজেলার বাহাড়া, হবিবপুর ও শাল্লা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ৫০ জন বিভিন্ন শ্রেণির কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায় এ বছর বোরো ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। কেদার প্রতি গড়ে ফলন হয়েছে ২০-২২ মনের মত।
যাহা অন্যান্য বছরের তুলনায় ৫-৭ মন বেশি। শাল্লার অধিকাংশ কৃষকের ধান কাটা ও ধান গোলায় তুলা প্রায় শেষ পর্যায়ে, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে যেটুকু বাকি আছে তাও শেষ হয়ে যাবে। উনাদের কাছ থেকে আরও জানা যায়- করোনার কারণে বাহির থেকে ধান কাটার শ্রমিক না আসাতে, প্রতিটি গ্রামেই যাদের জমি কম বা যাদের জমি নাই তারা ১০-১৫ জন মিলে দল গঠন করে ধান কাটার কারণে ধান কাটার শ্রমিক সংকটে পড়তে হয়নি। কৃষকেরা আরও
জানিয়েছেন প্রতি বছরই বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ায় ক্ষেতের অনেক পাকা ধান ঝড়ে পড়ে যেত কিন্তু এ বছর বৈশাখী ঝড়ো বাতাস না হওয়াতে ক্ষেতের ফলন ভাল হয়েছে।
শাল্লা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, শাল্লা উপজেলায় এ বৎসর বোরো ধানের
আবাদ হয়েছিল ২১,৮৮২ হেক্টর জমিতে এবং ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল
১,৪১,০৮৭ মেট্রিকটন। কৃষি অফিসের ধারণা এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ধান উৎপাদিত হয়েছে শাল্লায়। হবিবপুর ইউনিয়নের আগুয়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কল্যাণব্রত চৌধুরী বলেন আমি জমি করেছি ৫২ কেদারের মত। কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। ধান পাবো ১২০০ মনের মত।
আমার ধারণা থেকে অনেক বেশি ধান পেয়েছি। সব কথার শেষ কথা ধানের এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। নগট টাকা দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে, তাই কম দামে অর্থাৎ মন প্রতি ৫০০ টাকায় ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। ধানের দাম যদি আর একটু বেশি হতো তাহলে ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ আরো বেড়ে যেত।
প্রতাপপুর গ্রামের কৃষক দুলাল চন্দ্র দাস বলেন- আমি ৩২ কেদার জমি করেছি, কাটা প্রায় শেষ। ৪ কেদার জমি বাকি রয়েছে। আমাদের এলাকায় বৈশাখের শুরুতে হালকা শিলা বৃষ্টি হওয়ায় ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তারপরও গত বারের চেয়ে অনেক বেশি ধান পাব।
এলাকার ঢাকাইয়া পার্টি, গার্মেন্টেসের কর্মীরা আসাতে ও এলাকার শ্রমিকরা মিলে ধান কাটার পার্টি করাতে ধান কাটতে কোন সমস্যা হয়নি। ফলে সুন্দরভাবে কৃষকদের গোলায় ধান উঠেছে। তবে ধানের দাম কম থাকায় হাওরাঞ্চলে কৃষকের মুখে কোনো হাসি নেই।