দিরাই প্রতিনিধি :-সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানের পর আবু সাঈদ (৩৩) এর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ক্ষতিপূরণ ও পরিবারকে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিলেট জিওসি, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ দিরাই ও জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে এই নোটিশ প্রেরণ করেন।
নোটিশে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী শিশির মনির বলেন, একজন আইনজীবী ও সুনামগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে তিনি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছেন, একজন নিরীহ পেশাজীবী নাগরিক রাষ্ট্রীয় অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন—যার বিরুদ্ধে পূর্বে কোনো মামলা বা অভিযোগ ছিল না। এটি আইনের শাসন, মানবাধিকার ও রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিতার জন্য চরম প্রশ্নবিদ্ধ ঘটনা।”
গত ২২ জুন দিরাই উপজেলার তারাপাশা গ্রামের বাসিন্দা সহকারী ইলেকট্রিশিয়ান আবু সাঈদ পাশের জগন্নাথপুর উপজেলার গাদিয়ালা গ্রামে বিদ্যুতের কাজ করতে গিয়ে যৌথ বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। ঘটনার সময় তার সঙ্গে ছিলেন চাচাতো ভাই আলী আকবর। এলাকাবাসী জানান, নিহতের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা অপরাধ সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ নেই।
ঘটনার পর এলাকা ঘিরে ফেলে বাহিনী। রাতভর কাউকে ঘটনাস্থলে যেতে দেওয়া হয়নি। পরদিন সকালে পরিবারের সদস্যরা গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেন। নিহতের বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া ২৬ জুন জগন্নাথপুর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা (নং-১৮) দায়ের করে।যা এখন তদন্তাধীন। তবে ১০ দিন পার হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
আইনি নোটিশে এডভোকেট শিশির মনির তিনটি মৌলিক দাবির প্রতি জোর দিয়ে বলেন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন:যৌথ বাহিনীর অভিযানে একজন সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ায় ঘটনাটি তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন আবশ্যক বলে তিনি উল্লেখ করেন। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান:নিহত আবু সাঈদ ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যুর পর পরিবারটি চরম আর্থিক ও মানসিক সংকটে পড়েছে। এজন্য ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানানো হয়। পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা:নিহতের স্ত্রী, শিশু সন্তান ও বৃদ্ধ মায়ের জন্য নিরাপদ ও সম্মানজনক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
আইনি নোটিশে আরো বলা হয়, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের জীবন সুরক্ষার অধিকার রয়েছে। সাত দিনের মধ্যে উল্লেখিত দাবি বাস্তবায়িত না হলে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্টে রিট দায়েরসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে জানানো হয়।
এডভোকেট শিশির মনির বলেন, “এই নোটিশ জনস্বার্থে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ও রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য পাঠানো হয়েছে।”