ইমরান হোসাইন, চাপতির হাওর থেকেঃ-বৈশাখী বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেল সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরের ৫ হাজারের ও বেশি জমির ধান। বুধবার দিবাগত রাত ১২ টার পরে হাওররক্ষা বেড়ী বাঁধ প্রকল্পের ২১ নং পিআইসির অধীনে থাকা চাপতির হাওর হাওরের বৈশাখি নামক বাঁধ টি ভেঙে গেছে। বুধবার বিকাল তিনটার পর টাংনির হাওরের জারলিয়া বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করতে থাকলে কয়েক ঘন্টা চেষ্টা করে আটকাতে সক্ষম হয় এলাকাবাসী। কিন্তু রাতের আধারে বৈশাখি বাঁধ ভেঙ্গে প্রবল গতিতে চাপতির হাওরে পানি প্রবেশ করতে থাকে। হাওর পাড়ে থাকা ৪৬ টি গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে ডাকা হয় মানুষকে বাঁধটি রক্ষায়। কিন্তু মূহুর্তের মধ্যে ভাঙ্গা অংশটি অনেক বড় হয়ে যাওয়ায় হাওরটি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। চাপতির হাওর পারে কৃৃৃষকদের অভিযোগ বৈশাখি বাঁধটির পিআইসির লোকজন প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বলয়ে থেকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে খুবই দূর্বলভাবে ধীরগতিতে মেরামত কাজ করেছে। ফলে অকাল বন্যার পানির ধাক্কায় নিমিষেই ভেঙে যায় বাধটি। সরেজমিনে ডুবে যাওয়া চাপতির হাওর এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক কৃষাণীর সাথে আলাপ কালে এসব অভিযোগ করেন তারা।
দিরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় চাপতির হাওরে কৃষকের প্রায় ৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমির আধা পাকা বোরো ধান ছিল । উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে বৈশাখি বাঁধটি ভেঙে এলাকার হাজার হাজার কৃষকের স্বপ্নের একমাত্র ফসল তলিয়ে গেল।
এদিকে, আগাম বন্যায় একমাত্র বোরো ফসল চোখের সামনে তলীয়ে যাওয়ায় হাওর এলাকার কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এলাকার কৃষকের কান্না আর আহাজারিতে পুরো হাওর এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। সামনের বছরটি কি খেয়ে কিভাবে পার করবেন কিছুই বুঝতে পারছে না তারা।কচুয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ইন্দ্র সেন দাস বলেন,১৮ বিঘা জমি রমজমা নিয়ে দেড় লাখ টাকা খরচ করে চাষ করেছিলেন তিনি। রাতে বাঁধটি ভেঙে তার সকল জমি তলিয়ে গেছে। ৫ ছেলের জনক তাজপুর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, এবছর ৪০ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছেন। বছর শেষে মহাজনদের বিঘা প্রতি ৫ মন ধান দেয়ার শর্তে এক বছরের ইজারা চুক্তি নিয়েছেন তিনি। নিজের ছেলেদের নিয়ে হালচাষ ও সমস্ত কাজ করেও ঋন করে ২ লাখ টাকা খরচ করেছেন। হাওর তলিয়ে যাওয়ায় মহাজনের ধান দেয়া না লাগলেও তার দু লাখ টাকা ঋন পরিশোধ করবেন কিভাবে।
হাওর পাড়ের কৃষকদের অভিযোগ, বাঁধ মেরামত কাজে সরকারি দলের প্রভাবশালী পিআইসি সিন্ডিকেট, কাবিটা কমিটির মৌসুমী বানিজ্য, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও সীমাহীন দুর্নীতির কারনেই আগাম বন্যায় এভাবে একের পর এক বাঁধগুলি ভেঙে যাচ্ছে। বছর বছর হাওর তলিয়ে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে কৃষক। আর হাওর রক্ষা বাঁধ মেরামতের নামে প্রতি বছর পকেটে ভারি হচ্ছে পিআইসি নামক সিন্ডিকেট বানিজ্য কারবারিদের।
এদিকে একহাওর ডুবি নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে খোদ সরকারি দলের লেকজনের মাঝেই। বিক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতাকে ইঙ্গিত করে দিরাই পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়া তার ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন টাকা খেয়ে পিআইসি দিয়েছে এক বাবু, এদের কারনে আজ কৃষকের স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। তিনি এসকল দূর্নীতিবাজ বাবুদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য এলাকাবাসীকে আহবান জানান তিনি। দিরাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায় তার ফেইসবুক আইডিতে লিখেছেন গভীর রাতে দিরাই উপজেলার বিভিন্ন হাওরের বাঁধ ভাঙার খবর আসছে৷ রাতের গভীরে হাজার হাজার কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম, অর্থ ও স্বপ্ন সব বিসর্জন হচ্ছে৷ বুক ভাঙা কান্নার নোনাজলে প্রতিটা কৃষকের ঘর কাঁদছে ৷ শুধুমাত্র গুটিকয়েক দূর্নিতিবাজ নেতার কারনে আজকের এই অবস্থা৷
কৃষক ত্রাণ নয়, সাহায্য নয়, সরকারী অনুদান নয়, কৃষক তার নিজ ক্ষেতের ফসল ঘরে উঠাতে চায়৷ তবে পিআইসির ডাকাতদের জন্য কৃষকদের স্বপ্ন হাওরের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে৷