আনিসুল হক মুনঃ
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার মানুষের চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির একমাত্র নির্ভরতা শাল্লা হাসপাতাল। প্রায় দুই লাখ মানুষের বিপরীতে ৩০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটি চিকিৎসা সেবা দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। লোকবল সংকটের পাশাপাশি নেই কোনো আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতিরও ব্যবস্থা। নানা সমস্যায় জর্জরিত এ হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম।
৩০ শয্যার হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৪ সালে। তিন যুগ পেরিয়ে গেলেও রং করা ছাড়া কোন ধরনের সংস্কার কাজের বাস্তবায়ন হয়নি। ভেঙে গেছে অনেক দরজা জানালা। হাসপাতালটিকে ৩০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতির জন্য কাজ শুরু হয় দুই বছর আগে কিন্তু এখন পর্যন্ত ৬০ ভাগ কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
নেই বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষার ল্যাব। ২০০৫ সালে আসা কোটি টাকা মূল্যের এক্সরে মেশিনটি এখনও বাক্সবন্দি। দীর্ঘ দিন থেকে গাইনি ডাক্তার না থাকার কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গর্ভবতী এবং প্রসূতী মায়েরা।
প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় জরুরী রোগীকে পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে সুনামগঞ্জ বা সিলেটে। আর এতে পড়তে হয় আরেক বিড়ম্বনায়। নেই কোনো এম্বুলেন্স। নৌ এম্বুলেন্স থাকলেও নেই কোন চালক। তাছাড়া, হাসপাতাল সূত্রে জানা যায় ডাক্তার, নার্স,মিড ওয়াইফ,অফিস স্টাফ সহ লোকবল সংকট রয়েছে হাসপাতালটিতে।
ডাক্তার সংকটঃ ৯ জন ডাক্তারের মধ্যে কর্তব্যরত আছেন ৮ জন। এর মধ্যে দুইজন প্রেষণে অন্য জায়গায় কাজ করছেন।
জুনিয়র কনসালটেন্টঃ– জুনিয়র কনসালটেন্ট গইনি, সার্জারি, মেডিসিন, এনেসথেসিয়া এর সব কয়টি পদ দীর্ঘদিন থেকে খালি।
টেকনোলজিস্ট সংকটঃ নেই প্যাথলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, ডেন্টাল টেকনোলজিস্টও।
স্যাকমোঃ ৫ জনের জায়গায় আছে একজন।
মিডওয়াইফঃ ৪জন মিডওয়াইফ এর জায়গায় আছে মাত্র ২ জন। এর মধ্যে ১জন প্রেষণে অন্যত্র কাজ করেন।
অফিস স্টাফঃ অফিস স্টাফদের মধ্যে নেই পরিসংখ্যানবিদ, ক্যাশিয়ার আছেন একজন।
আয়াঃ ৪ জনের জাায়গায় আছে ১ জন।
যানবাহন সমস্যাঃ হাসপাতালে জরুরি রোগী পরিবহনের জন্য নেই এম্বুলেন্স। বর্ষায় রোগী পরিবহনের জন্য একটি নৌ এম্বুলেন্স থাকলেও এটি দুুই বছর ধরে নষ্ট হয়ে পরে আছে। তাছাড়া নৌ অ্যম্বুলেন্স এর কোন চালক নেই।
এ বিষয়ে শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কামরুল হাসান বলেন, ‘আমরা আমাদের সংকটের কথা মাননীয় এমপি মহোদয় এবং সিভিল সার্জনকে জানিয়েছি। হয়তো আস্তে আস্তে এর সমাধান হবে’। তিনি আরও বলেন ‘হাসপাতালের স্টাফদের আবাসিক সমস্যা থাকার কারনে অনেককে ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে। ’
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শামস উদ্দিন বলেন‘ শাল্লার মানুষের জন্য আমি সম্প্রতি মাননীয় মন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময় তাদের দুর্ভোগের কথা দৃঢ়ভাবে বলেছি, বিশেষ করে জনবল সংকট, অ্যাম্বুলেন্সসহ শাল্লা হাসপাতালের নানা সমস্যার কথা নিয়ে আমি মন্ত্রণালয়ে লেখালেখিও করছি, দেশের চলমান করোনা সংকট কেটে গেলে হয়তো মানীয় মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আমাদের এসব সংকটও আমরা কাটিয়ে উঠবো’।