নিজেস্ব প্রতিনিধ: সুনামগঞ্জের নিভৃত পল্লী শাল্লায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেতে বিক্ষোভ চলছে। বরাদ্দকৃত ঘর কাটা হলে জীবন উৎসর্গ করতে হুঁশিয়ারী দিচ্ছেন তারা। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের আহাজারী যেন থামছেই না। উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের শান্তনা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন।
এদিকে, যাদের দুর্নীতির কারণে এসব ঘর জেলা প্রশাসন থেকে কাটা হচ্ছে তারা জনরোষের মুখে পড়ছেন। গৃহহীনদের দাবী ঘর নির্মাণে অনিয়মের সাথে যারা জড়িত তারা শাস্তি পাক। কিন্তু ঘর কেটে অসহায়দের কলিজায় আঘাত দেবার কি প্রয়োজন? আমাদের ঘরে ঘরে মালামাল পৌঁছে গেছে। এখন আমরা জান দিব কিন্তু মাল দেবনা এমন প্রতিশ্রুতিতে একাট্টা হয়ে গৃহহীনরা নামছেন আন্দোলনে।
জানা যায়, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ১৬০০ ঘর অনুমোদন দেয় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২। পর্যায়ক্রমে এসব ঘরে মালামাল পৌঁছে দেয়া হয়। মালামাল পেয়ে গৃহহীনরা উচ্ছসিত হন। অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে উঠবেন তাই পুরাতন ঘর প্রায় ভেঙ্গে ফেলেছেন। আবার অনেকেই এসব ঘরের মালামাল আনতে পরিবহনসহ আনুসাঙ্গিক খরচ স্থানীয় ইউপি সদস্যদের তাদের গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেতে টাকা লাগে এমন কথা গণমাধ্যমকর্মীরা জেলা প্রশাসককে অবগত করেন।
জেলা প্রশাসক গত ৫ ফেব্রুয়ারী ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়ে শাল্লায় ঘর পরিদর্শনে যান। চারটি ইউনিয়নে ভাগ হয়ে পরিদর্শন শেষে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পেশ করেন। এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক দুই শতাধিক ঘর অন্য উপজেলায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। এমন খবরে শাল্লায় গৃহহীনদের চোখে নামে জল। তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে উপজেলা নির্বাহী অফিস ঘেরাও করেন। ঘর চাই, ঘর চাই বলে শ্লোগান তুলে। নির্বাহী কর্মকর্তা ক্ষুব্দ জনতাকে শান্তনা দিয়ে বলেন, আপনাদের সবার ঘর যাতে স্ব স্ব জায়গায় বহাল থাকে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসককে আমি অনুরোধ করব। তারপর ভুক্তভোগী জনতা শাল্লা উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনের সামনে যায়। উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল-আমীন চৌধুরীও তাদের ঘর বহাল থাকবে বলে শান্তনা দেন।
২নং হবিবপুর ইউপি’র টুকচানপুর গ্রামের সুজাত খাঁ বলেন, ঘরের লিস্টে আমার নাম উঠে গেছে, ঘরের মালামালও চলে আসছে ঘর পাব বলে আমার পুরাতন ঘরটিও ভেংগে ফেলেছি। এই সুবাদে আমার ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এখন এলাছ মেম্বার আমাকে বলছে তুমি ঘর পাবে না। আটগাও ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফুল মিয়া বলেন, ঘর পাওয়ার খবর শুনে আমি ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে একটা গরু বিক্রি করেছি ঘরের মালামাল ও আনুষাঙ্গিক খরচের জন্য। কিন্তু এখন মেম্বার বলছে আমার ঘর কাটা যাবে। তিনি আরো বলেন, আমার ঘরের মালামাল চলে আসছে এখন যদি আমাদের মাল ফেরত নিয়ে যায় আমরা মরতে রাজি তারপরও মাল দেব না।