খলিল রহমান:
প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সুনামগঞ্জের একটি উপজেলা শাল্লা। এই উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, একটি সড়ক নির্মাণের। সে লক্ষ্যে ২০১০ সালে ১১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দিরাই-শাল্লা সড়ক নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। ২০১৭ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটি অসমাপ্ত থেকে যায়। এই কাজ শেষ করতে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব গেছে।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বলেন, নতুন প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোর পর মন্ত্রণালয় থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে পরিদর্শন করে গেছেন। এটা হাওর এলাকা। হাওর এলাকার পানির প্রবাহ, ঢেউ, কাজের স্থায়ীত্বসহ নানা বিষয় মাথায় রেখে নতুন নকশায় কাজ হবে। প্রকল্প প্রস্তাবটি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে।
এদিকে হাওর-অধ্যুষিত সুনামগঞ্জের যোগাযোগের দুর্ভোগ ঘোচানোর প্রকল্পটি অসমাপ্ত থাকায় বর্ষায় নৌকা আর শুকনা মৌসুমে হেঁটেই যাতায়াত করছেন জেলার বেশির ভাগ মানুষ। সুনামগঞ্জের সবচেয়ে দুর্গম উপজেলা শাল্লা। এ উপজেলার মানুষ জেলা সদরে যাতায়াত করেন পাশের দিরাই উপজেলা হয়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখন শুকনা মৌসুমে ভাড়ায় কিছু মোটরসাইকেল চলে। এতে জনপ্রতি ১০০ টাকা দিতে হয়। তবে গরিব মানুষের ভরসা ‘পা’। এখন নৌকায় শাল্লা থেকে দিরাই আসতে ভাড়া লাগে ৫০ টাকা। ইদানীং ভাড়ায় স্পিডবোট চলছে। এতে জনপ্রতি ভাড়া ২৫০ টাকা। এটিও ‘বড়’লোকদের জন্য।
সুনামগঞ্জ-২ আসনে (দিরাই-শাল্লা) সাতবার নির্বাচিত সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এই সড়কের জন্য বহু চেষ্টা করেছেন। তাঁর চেষ্টা-তদবিরে ২০১০ সালের প্রকল্পটি নেওয়া হয়। ২০১৭ সালে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটি অসমাপ্ত থাকে। এই প্রকল্প অনুযায়ী দিরাই উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে রাজাপুর, নাসনি, কাশিপুর, আনন্দপুর হয়ে সড়ক যাবে শাল্লায়। সড়কে মাটি ফেলার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয় ১৭টি সেতু ও কালভার্ট। ইতিমধ্যে এসব সেতু ও কালভার্টের অন্তত ছয়টি ধসে পড়েছে।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, দিরাই-শাল্লা সড়কের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে এখন আরেকটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫১ কোটি টাকা। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দুই দফা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন মে মাসে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দিরাই পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে দক্ষিণমুখী সড়কটি গেছে শাল্লার দিকে। কিছুটা এগোলে একটি সড়ক বাঁ পাশে গেছে বাউল শাহ আবদুল করিমের বাড়ির দিকে। অন্যটি ডান দিকে শাল্লায়। সড়কের পিচঢালাই ওঠে অনেক স্থানে গর্ত হয়ে আছে। সড়কের বায়ে বরাম হাওর, ডানে উদগল হাওর। সড়ক ভাঙাচোরা হলেও দিরাই থেকে মোটরসাইকেলে করে সড়কের টেলিফোন বাজার পর্যন্ত এখন যাওয়া যায়। সড়কের তলবাউসি গ্রামের কাছে একটি সেতু ভেঙে গেছে। এরপর আর পাকা সড়ক নেই। কিছু দূর এগোলে চোখে পড়ে সড়কের বেশ কিছু অংশ ভেঙে খালের মতো হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, শুকনা মৌসুমে এর পাশে ফসল রক্ষা বাঁধ দেওয়া হয়। এই বাঁধের ওপর দিয়েই তখন চলাচল করে মানুষ। কিন্তু বর্ষায় সেই সুযোগ থাকে না। মাছুয়াখাড়া নামের এই স্থান সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এরপর ধনপুর গ্রামের পাশে আরেকটি সেতু ভেঙে পড়ে আছে পানিতে। স্থানীয়রা বলছেন, যেখানে সেতু-কালভার্টের দরকার নেই, সেখানে করা হয়েছে। আবার যেখানে দরকার ছিল, সেখানে করা হয়নি।
ধনপুর গ্রামের বাসিন্দা লুৎফুর রহমান বলেন, ‘কাজ শুরু হওয়ায় আশা করেছিলাম, হয়তো দিরাই-শাল্লা সড়ক হবে। কিন্তু কিছু কাজ হওয়ার পর কাজে ধীরগতির কারণে হাওরের ঢেউয়ে অনেক স্থান ভেঙে গেছে। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে কয়েকটি সেতু ও কালভার্ট।’
এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ জয়া সেনগুপ্তা বলেন, প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক কিছু জটিলতা এবং ভুলের কারণে তিনবার প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয় থেকে জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ে ফেরত যায়। তবে এই সড়ক বাস্তবায়নে তাঁর চেষ্টা অব্যাহত আছে।