দিশা ডেস্ক :: বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। এ ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলাগুলোয় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেয়া হলেও আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উপকূলীয় জেলার কৃষকরা। তাদের আশঙ্কা, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পাকা ধান মাঠেই ঝরে যেতে পারে। আর কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ঝড়ো হাওয়ার পাশাপাশি জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হতে পারে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—
সাতক্ষীরা: এ উপকূলীয় জেলায় এবার ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে কেবল ১০ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। এছাড়া জেলায় এবার ছয় হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে গতকাল জেলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে পাকা ধান কাটতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে কৃষকদের।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানলে আমনের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হতে পারে। কারণ এখন মাঠে পাকা ধান। এ নিয়ে আমরাও দুশ্চিন্তায় আছি।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. বদিউজ্জামান (সার্বিক) জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় জেলার ১৩৭টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালীগঞ্জ এলাকায় মাইকিং করে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সুন্দরবনের জেলে-বাওয়ালিদের পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
বাগেরহাট: জেলায় এবার ৫৭ হাজার হেক্টরে আমন ধান আবাদ হয়েছে।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল বৃষ্টি হলেও এতে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। তবে ঝড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাস দেখা দিলে ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় গতকাল জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুল ইসলামকে জেলার ফোকাল পারসন হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, জেলায় ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যোগের খবর নেয়া, জানা, কোথাও কোনো বড় ধরনের সমস্যা হলে তাত্ক্ষণিকভাবে খবর নেয়ার জন্য জেলায় ১০টি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় আমাদের মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে জনসাধারণকে সচেতন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সমুদ্রে থাকা সব নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি কোনো নৌযান নির্দেশ অমান্য করে যাতে চলতে না পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামান মিলন বলেন, ওয়ার্ড পর্যায়ে ইউপি সদস্যরা জনসাধারণকে সচেতন করছেন। পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকরাও প্রস্তুত রয়েছেন।
স্থানীয় কৃষক আবুল হোসেন বলেন, আমরা না হয় আশ্রয়কেন্দ্রে গেলাম। কিন্তু ধান তো মাঠে রয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ে ধান ঝরে গেলে আমাদের পক্ষে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।
ভোলা: ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় এ জেলায় ৬৪৮টি আশ্রয় কেন্দ্র ও আটটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া গঠন করা হয়েছে ৯২টি মেডিকেল টিম। তবে মাঠে থাকা আমন ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ভোলায় ১ লাখ ৮৯ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। ধান পাকতে শুরু করলেও এখনো পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়নি। আর ৫১৮ হেক্টর জমিতে খেসারি চাষ হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে এসব ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিনয় কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, বাতাস ও জলোচ্ছ্বাস হলে ক্ষতি বেশি হবে। বৃষ্টিতে তেমন ক্ষতি হবে না।
ভোলার জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুত নেয়া হয়েছে। ১৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এছাড়া বরিশাল ও খুলনাসহ অন্যান্য উপকূলীয় জেলায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, জেলায় ২৩২টি সাইক্লোন শেল্টার কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনে বিভিন্ন বিদ্যালয় ভবনকে আমরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ব্যবহার করব।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য খুলনায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দুর্যোগপরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় চিড়া, গুড়, মুড়িসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ মজুদ রাখা হয়েছে।
সূত্র- বণিকবার্তা