স্টাফ রিপোর্টার ::
শাল্লায় কুশিয়ারা, দারাইন ও সুরমা নদীর তীর কেটে দেওয়া হচ্ছে মাটিমিশ্রিত বালু-মাটির বাঁধ। ২০১৭ সালের সংশোধিত কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী মানসম্মত বাঁধ তৈরি হচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক-জনতা। সরেজমিনে এমনই চিত্র দেখা গেছে শাল্লা উপজেলার বেশক’টি বাঁধে।
কুশিয়ারা নদীর ডানতীর ৫৪নং প্রকল্পে ২৬২ মিটারে মাটি কাটা হচ্ছে ওই নদীর পাড় কেটে। এমনিতেই ফয়েজ্জুল্লাপুর, বিষ্ণুপুর ও ভেড়াডহর গ্রাম রয়েছে নদী ভাঙ্গনের মুখে। তার উপর নদীর তীর কেটে একেবারে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি এনে ফসলরক্ষা বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। তাও আবার অধিকাংশ বালু মিশ্রিত। ওই বাঁধে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন- এভাবে বাঁধ তৈরি নদীকে ডেকে আনা হচ্ছে বাঁধ ভাঙার জন্য। এর পাশেই ৫৪ (ক) প্রকল্পে একই ধরনের অবস্থা। স্থানীয়রা জানান, বিদেশ ফেরত আবু তাহের এই প্রকল্পের অধিকারী। তাই নদীরপাড় কাটার পাশাপাশি পিআইসি বাঁধের সুযোগে একটি বিরাট পুকুরও বানিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
অপরদিকে, ৫৫নং প্রকল্পে ৫৫০ মিটারে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৫ লাখের বেশি টাকা। এই তিনি বাহাড়া ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি পিযুষ কান্তি দাস। এই প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, পুরনো বাঁধের মাটিই অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।
বরাম হাওরের প্রকল্প নং ২-এর সভাপতি সবুজ মিয়া। ৪১১ মিটারে বরাদ্দ হয়েছে ১৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
এই প্রকল্পের বিষয়ে ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের বাসিন্দা রাজমোহন দাস বলেন, এইতাত মাটির দরকারই ছিলো না। মিছা কথা কইতাম না বাবু। দুইটা ভাঙ্গাত মাটি দিলেই অইত। আপনারা দেখুন না, উপরে উপরে মাটি ফালাইছে। তদারকি কমিটির সদস্য বাদল চন্দ্র দাস বলেন, বাঁধে ৬ ইঞ্চি মাটিও ফালায় নাই। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
বরাম হাওরের ৩নং প্রকল্পের সভাপতি মিহির চক্রবর্তী। এই প্রকল্পে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কাটচ্ছেন তিনি। এই প্রকল্পের ১১৯৫ মিটারে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ লাখ ২৩ হাজার টাকা। এখনো কাজ অর্ধেকও হয়নি। কাদামাটির স্তূপ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বাঁধ।
বরাম হাওরের ৪নং পিআইসি সভাপতি সরজীবন দাসের প্রকল্পেও মাটি মিশ্রিত বালু দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বাঁধ। যা ফসলরক্ষার কোনো কাজে আসবে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
অপরদিকে ভেড়াডহর হাওরের ৪১নং উপপ্রকল্পের সভাপতি নরেশ অধিকারীর যে বাঁধ তৈরি করছেন তা অপ্রয়োজনীয় বলছেন এলাকবাসী। এখানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে উপর্যুক্ত প্রকল্পে গিয়ে নানা অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে ১০ ফেব্রুয়ারি ছায়ার হাওর ৯৮নং উপ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, দারাইন নদীরপাড় কেটে তৈরি করা হচ্ছে বালু-মাটির বাঁধ। এখানে ৪৮০ মিটার বাঁধে বরাদ্দ ১৫ লাখেরও বেশি। এখানে বাঁধের গোড়া থেকে কাটা হচ্ছে মাটি।
১২৪নং পিআইসি সভাপতি রঞ্জন সরকার বাঁধে মাত্র কাদামাটি স্তূপ করতে শুরু করেছেন। ১০৮ ও ১১০-এর মাঝে পিআইসির সাইনবোর্ড পাওয়া যায়নি। এখানে পুরনো বাঁধের দুই ফুট মাটিকে কেটে ফেলে বাঁধ তৈরি হচ্ছে। এসব বাঁধগুলোর কোনোটাতেই নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে না।
নবনিযুক্ত উপ-প্রকৌশলী মো. আ. কাইয়ুম বলেন, আমি মাত্র ১১ দিন হলো শাল্লায় এসেছি। এরমধ্যে ৭ দিন আমাকে সুনামগঞ্জ যেতে হয়েছে। আমি বাঁধগুলোতে যাবো এবং ব্যবস্থা নেবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মুক্তাদির হোসেন বলেন, আমি ঢাকায়। উপজেলা তদারকি কমিটিকে দায়িত্ব দিয়ে এসেছি। কাজে অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা কমিটি অনিয়মের বিষয়ে রিপোর্ট দিলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। কারণ পিআইসিদের সাথে ওই কমিটিরই যোগসূত্র রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বরাদ্দ ১১৫ টি প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল প্রায় ২৩ কোটি টাকা। এবছর ১৩৭টি প্রকল্পে বরাদ্দ হয়েছে ২৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তবে উপজেলা সুধীসমাজ বলছেন প্রোফাইল অনুযায়ী কোনো পিআইসিতেই কাজ হচ্ছে না। তাছাড়া ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।
admin
১১:২৫ অপরাহ্ণ