একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল শাহ আবদুল করিমের দশম মৃৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, শাহ আবদুল করিম ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ। তিনি জীবনভর শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে মানুষের মুক্তির জয়গান গেয়েছেন। তাঁর জীবন-দর্শনের চর্চা বাড়াতে হবে। তাঁর সৃষ্টিকে ধরে রাখতে সুনামগঞ্জে শাহ আবদুল করিম সাংস্কৃতিক একাডেমি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। জেলা শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহসভাপতি প্রদীপ পালের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ পৌর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. শেরগুল আহমেদ, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবদাস চৌধুরী, জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শাহ আবদুল করিমের গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা।
একইভাবে মৃত্যুবাষির্কী পালন উপলক্ষে শাহ আবদুল করিমের জন্মস্থান সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার
উজানধল গ্রামে সন্ধ্যায় আলোচনা ও সংগীতানুষ্ঠান হয়েছে। শাহ আবদুল করিম পরিষদ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি বাউল শাহ আবদুল করিমের একমাত্র ছেলে শাহ নূর জালাল। এর আগে বাউলস¤্রাট শাহ আবদুল করিমের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এখানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিশ্বজিৎ দেব, বাউল রণেশ ঠাকুর ও সিরাজ উদ্দিন, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহফুজুল রহমান, দিরাই প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি সোয়েব হাসান প্রমুখ। পরে করিমের ভক্ত-শিষ্যরা তাঁর গান পরিবেশন করেন।
শাহ আবদুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা উজানধল গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম…’, ‘গাড়ি চলে না চলে না চলে না রে…’, ‘ বসন্ত বাতাসে সই গো বসন্ত বাতাসে…’, ‘বন্ধে মায়া লাগাইছে পিরিতি শিখাইছে দিওয়ান বানাইছে…, সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান লিখেছেন। তাঁর জীবন দর্শন ও গান নিয়ে বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ও মঞ্চ নাটক। তাঁর নিজের রচিত গ্রন্থগুলো হলো আফতাব সংগীত, গণসংগীত, কালনীর ঢেউ, ধলমেলা, ভাটির চিঠি, কালীর কূল। শাহ আবদুল করিম ২০০১ সালে একুশে পদক পান। এ ছাড়াও তিনি মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননাসহ আরও অনেক সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
শাহ আবদুল করিম ছিলেন শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে
স্টাফ রিপোর্টার ও দিরাই প্রতিনিধি