দিরাই প্রতিনিধি –
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শৈলেন্দ্র কুমার তালুকদারের সিদ্ধান্তে এক মুক্তিযুদ্ধা পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। লগু অপরাধের গুরু দন্ড মাথায় নিয়ে পরিবারের লোকজন মানবেতর জীবনযাপন পার করছেন। তারা না পারছেন ঘর থেকে বের হতে,না পারছেন ব্যবসা পরিচালনায় বসতে।পাঁচ হাজার টাকা উল্টো জরিমানার ভয়ে গ্রামের নিকটাত্মীয় কেউ যোগাযোগ করছেনা ঐ পরিবারের সাথে। আলোচিত এ ঘটনাটি জেলার দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের নোয়াগাও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সহদেব দাসের পরিবার ঘিরে। গ্রামের সালিসি বৈঠকে বিধি লঙ্ঘনকারী সমাজচ্যুতির এ রায়টি ঘোষণা করেন রফিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র কুমার তালুকদার।
সরেজমিনে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার,চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র কুমার তালুকদার ও স্থানীয় জনগনের সাথে কথা বলে জানা যায়,গেল শনিবার বিকেলে নোয়াগাও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সহদেব দাস ও গ্রামের সাবেক মেম্বার তাপস তালুকদারের মাঝে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির কান্ডকে কেন্দ্র করে ঐদিন মীমাংসার চেষ্টা করেন চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র কুমার তালুকদার। তাৎক্ষণিক বিষয়টি সমাধান না হওয়া একদিন পর কয়েক গ্রামের লোকজনের উপস্থিতিতে সোমবার বিকাল চারটায় আবারো সালিসি বৈঠকে বসেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। বৈঠকে তাপস তালুকদারের লোকজন উপস্থিত হলেও মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের কেউ আসেননি। বার বার ডেকে পাঠালেও আগামী শুক্রবারে বৈঠক করার জন্য অনুরোধ করে মুক্তিযুদ্ধার পরিবার। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান, আমরা তুচ্ছ ঘটনাটি নিয়ে নানা নাটকীয়তা করা হয়েছে। এভাবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সমাজচ্যুত করা সম্পর্কে তারা বলেন এটা চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্গন করা হয়েছে।নোয়াগাও গ্রামের ভূষন দাস বলেন বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও চেয়ারম্যান কাউকে কিছুই বলতে দেননি।তিনি একাই আলোচনা করেন।আমরা কিছু বললে ধমক দিয়ে বসিয়ে দেন ।ভয়ে কেউই আর কিছু বলার থাকলেও বলেনা।বৈঠকে উপস্থিত ছাদিরপুর গ্রামের কর্পোরাল( অব) কবির আহমেদ বলেন একটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রেখে তার সব কিছু বন্ধ করাটা মানবাধিকার লংঘন। তবে গ্রামের বলে বিচারের চিত্রে এ ধরনের রায় চিরাচরিত নিয়ম চালু আছে।মুক্তিযোদ্ধা সহদেব দাসের মেয়ে অঞ্জনা দাস একই গ্রামে শশুরালয়। ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক এই মহিলা সদস্য বলেন সকালে আমি আমার পিতার পরিবারের লোকজনদের দেখে এসেছি, তারা খুব মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আত্মীয় স্বজনরা কেউ তাদের বাড়িতে যায়না।চেয়ারম্যান রায় করেছে কেউ আমার বাবার বাড়ির লোকজনের সাথে যোগাযোগ করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। মুক্তিযোদ্ধার ছেলে শ্যামল দাসের মালিকানাধীন নোয়াগাও বাজারে মুক্তিযোদ্ধা মৎস্য আড়তের ম্যানেজার পাশের ছাদিরপুর গ্রামের মোঃ জুসেদ মিয়া বলেন,মঙ্গলবার সকালে গাজিয়ার গাও গ্রামের সালিসি ব্যক্তি কৃষ্ণ কুমার তালুকদার এসে আমাকে বাজারের আড়তদারি দোকানটি বন্ধ করে অন্য বাজারে চলে যাইতে বলেছেন। স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য মাসুক মিয়া বলেন আমিও মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত সন্তান। সহদেব দাসের পরিবারের প্রতি যে অবরোধের আদেশ দেয়া হয়েছে তা চরম মানবাধিকার লংঘন। সমাজচ্যুত হয়ে কয়দিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধা সহদেব দাস বলেন,আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে সমাজচ্যুত করেছেন চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র কুমার তালুকদার তার মতের কিছু গ্রাম্য মোড়ল নিয়ে।আমার গবাদিপশু বাড়ির বাহিরে নিতে পারছি না,আমার আত্নীয় কাউকে তারা আমার বাড়িতে আসতে দিচ্ছেনা।এ অবস্থায় আমার বাঁচা মরা সমান।আমি আইনি প্রতিকার চাই। এব্যাপারে জানতে চাইলে একান্ত আলাপ কালে রফিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র কুমার তালুকদার বলেন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে শ্যামল দাস এলাকায় একজন খারাপ লোক হিসেবে পরিচিতি, এমন কোন অপরাধ নেই যা তার মাধ্যমে হয়নি।সেদিন আমার সামনে বাজার কমিটির সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য তাপস তালুকদারের সাথে যে অপরাধটি করেছে তাতে এলাকাবাসী তার উপর অসন্তুষ্ট হয়েছে।তাই তার পরিবারকে বৈঠকের মাধ্যমে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন আমি বৈঠক পরিচালনা করেছি, সভাপতি ছিলেন কুর্দন পুর গ্রামের কুপানন্দ সমাজপতি। বৈঠকে আরেকটা রায় হয়েছে এলাকার কেউ তাদের সাথে যোগাযোগ করলে নগদ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।