দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেছেন, বন্যা মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। বন্যাদুর্গত জেলাগুলোয় ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, সাড়ে ১৭ হাজার টন চাল এবং ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি জেলায় দু-এক দিনের মধ্যে ৫০০টি করে তাঁবু পাঠানো হবে।
তিনি আরও বলেন- লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার ও নীলফামারীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
শুক্রবার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা শেষে ত্রাণপ্রতিমন্ত্রী এনামুর এসব তথ্য জানান।
ত্রাণ বিতরণ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, আমাদের আর্থিক সঙ্গতি সবারই বেড়েছে। বাংলাদেশে এখন আর সেদিন নেই যে ত্রাণ চুরি করে খাবে, মেরে খাবে। এ রকম রিপোর্ট এখন আর আমরা পাই না। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের দেশপ্রেমও অনেক ভালো হয়েছে। ত্রাণ মেরে খাওয়ার মতো লোক দেখছি না। কারণ আমরা দেখেছি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ত্রাণ বিতরণ হয়েছে। আশা করি এবারও সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণ করব।
তিনি বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় বন্যা মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে মাঠপর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী এনামুর বলেন, ভারতে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় যমুনা নদীতে পানি বাড়বে এবং বিহারে গঙ্গার পানি বাড়ায় পদ্মার অববাহিকায় বন্যা দেখা দিতে পারে। ৬২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে, এরমধ্যে ২৬টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলোতে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৫৫১টি সেন্টারকে ঝুঁকিমুক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর ও লালমনিরহাটে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে এবং জামালপুরে ভাঙনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এগুলো মোকাবেলায় কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিকেল টিম গঠন করেছে এবং প্রচুর পরিমাণে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রস্তুত রেখেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরেও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাতে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায় সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। বন্যাকবলিত জনগণকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পানিবাহিত রোগ বিস্তার রোধে সিভিল সার্জনদের নেতৃত্বে টিম গঠন করা হয়েছে। খাদ্যগুদামে কর্মরতদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আমরা আশা করি বন্যায় মানুষের জীবন রক্ষা করতে এবং গবাদিপশু ও খাদ্যশস্যেও নিরাপত্তা দিতে পারব।
তিনি বলেন, ঢাকা থেকে ‘সার্বক্ষণিক মনিটরিং’ চলছে এবং জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারাও অত্যন্ত সক্রিয়। অনেকগুলো জেলা পরিদর্শন করেছি। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের গুণগত মানের উন্নয়ন দেখে আশ্চর্য হয়েছি। প্রতিটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোথায় কখন কী পরিমাণ সাহায্য যাচ্ছে সে খবরও তারা প্রত্যেকেই রাখেন। কী পরিমাণ বিতরণ হচ্ছে, কী পরিমাণ মজুদ আছে- সব একটি সুন্দর তালিকা করে মেনটেইন করা দেখে আমি অভিভূত হয়েছি।
প্রতিমন্ত্রী এনামুর বলেন, রোববার থেকে ডিসি সম্মেলনে অংশ নিতে সব ডিসি ঢাকায় থাকবেন। ভারপ্রাপ্ত ডিসি হিসেবে যারা দায়িত্বে থাকবেন তাদের কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করি সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিবারের মতো বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা সফল হব।
ত্রাণ সচিব শাহ কামাল বলেন, প্রতিটি জেলায় দুই হাজার প্যাকেট করে মোট ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে। একটি প্যাকেটে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, তেল, আটা, মসুরের ডাল, শিশু খাবারসহ একটি পরিবারের ৭ দিনের খাবার রয়েছে। দু’দফায় সাড়ে ১৭ হাজার টন চাল বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক চাহিদা পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে চাল দেয়া হবে।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ছাড়াও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।