প্রচণ্ড খরায় হাওরে বোর ধান পাকতে সহায়ক হয়েছে। হাওরজুড়েই শুরু হয়েছে ধান কাটা। একসঙ্গে সকল জাতের ধান পাকায় শ্রমিক ও হারভেস্টার যন্ত্রের চাহিদা বেড়ে গেছে। এই সুযোগে হারভেস্টার যন্ত্রের মালিকরা অতিরিক্ত টাকা দাবি করছে- এমন অভিযোগ আছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায়।
বৃহস্পতিবার দিরাই পৌর শহরের রাজাপুর এলাকার বড় কৃষক আব্দুস ছাত্তার বললেন, ‘আমার একশ কেয়ারের (তিন কেয়ারে এক একর) মত জমি আদ্যাভাগী (আধা আধি দেবার শর্তে) করিয়েছি। ধান পাকা শুরু হওয়ায় হারভেস্টার যন্ত্রের মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কেউই কেয়ারে দুই হাজার টাকার নীচে কাটবে না জানিয়েছে। আমি বর্গা চাষীদের বলেছি হারভেস্টার যন্ত্রের প্রয়োজন নাই। স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা শুরু কর, কেয়ারে ১৫ শ’ টাকায় কাটবে তারা।’
এই কৃষক জানালেন, একটি হারভেস্টার যন্ত্র দিনে ২০ কেয়ার থেকে ২৪ কেয়ার জমির ধান কাটতে পারে। এক কেয়ার জমি কাটতে সব মিলিয়ে ছয়-সাতশ টাকার বেশি খরচ হয় না। এই অবস্থায় ১৫শ টাকা কেয়ার প্রতি নিলেই বহু লাভ হয় তাদের। দুই-আড়াই হাজার টাকা দাবি করলে, এটি জুলুম হয়ে যায়।
একই এলাকার সুহেল আহমদ জানালেন, বুধবার নিরুপায় হয়ে অনেক অনুনয় বিনয় করে পাঁচ কেয়ার জমি ১০ হাজার টাকায় কাটিয়েছেন তিনি।
আব্দুস ছাত্তার ও সুহেল আহমদ বললেন, হারভেস্টার যন্ত্রের মালিকরা গত বছর ১২ থেকে ১৫ শ টাকায় প্রতি কেয়ার ধান কেটেছে। এবার আড়াই হাজার টাকা কেয়ার দাবি করছে তারা। কৃষকরা বললেন, যেহেতু যন্ত্র কিনতে সরকারের ভর্তুকি দেওয়া আছে। সুতরাং প্রতি কেয়ার জমির ধান কাটা বাবদ কৃষকদের কাছ থেকে কত টাকা খরচ নেওয়া যাবে, এটি নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। না হয় যার যত খুশী টাকা দাবি করবে, কৃষকরা নিরূপায় হয়ে দিতেও বাধ্য থাকবে।
শাল্লার বড় কৃষক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছত্তার মিয়া বললেন, আমারও হারভেস্টার যন্ত্র আছে। আমি বলে দিয়েছি, কোন কৃষকের কাছ থেকে ১৫ শ’ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। কিন্তু অনেকে শুনছি বেশি টাকা নিচ্ছে।
শাল্লার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত দাস জানালেন, উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার ইউনিয়নে ধান কাটা নিয়ে কোন কৃষকই সমস্যায় নেই। টাঙ্গাইল ও বানিয়াচঙ থেকে এখানে শ্রমিক এসেছে। হারভেস্টার যন্ত্রও আছে। কোন হারভেস্টার যন্ত্র কৃষকদের কাছে বেশি দাবি করেছে, এমন অভিযোগ পাওয়া যায় নি।
সুনামগঞ্জ কম্বাইন হারভেস্টার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জামালগঞ্জের আব্দুল্লা আল মামুন বললেন, হারভেস্টার যন্ত্রের মালিক সমিতির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়েছে ধান কাটতে প্রতি কেয়ারে জমির জন্য এক থেকে দেড় হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। তবে আনলোডে দূরত্ব বেশি থাকলে প্রতি কেয়ারে দুই-তিনশ টাকা বেশি দিচ্ছেন কৃষকরাই। এই বাড়তি টাকা ধান কর্তনের জন্য নেওয়া নয়। পরিবহন বাবদ খরচ হিসাবে নেওয়া হয়।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বললেন, কোন হারভেস্টার যন্ত্রের মালিক কেয়ার প্রতি দুই হাজার বা আড়াই হাজার টাকা দাবি করলে, বিষয়টি অবিচার হবে। এধরণের অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি দেখবো। প্রয়োজনে ওই এলাকায় অন্য হারভেস্টার যন্ত্র পাঠাব।