নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফেইসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় জড়িতদের ‘কোনো ছাড় দেওয়া হবে না’ বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ঘুরে দেখার পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
র্যাব প্রধান বলেন, “নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলার ঘটনায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না। যারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তাদের অতিদ্রুত আইনের আওয়তায় এনে বিচার নিশ্চিত করা হবে, যাতে আগামীতে এ ধরনের আর কোনো ঘটনা না ঘটে।”
পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, বুধবার সকালে ওই গ্রামে হামলা চালিয়ে ৬০-৭০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও আসবাবপত্র তছনছ করে হেফাজতে ইসলামীর অনুসারীরা। খবর পেয়ে শাল্লা থানা পুলিশসহ ও দিরাই থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গত সোমবার দিরাই উপজেলায় হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত সম্মেলনে যান হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। সম্মেলনে মামুনুল হকের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে স্থানীয় এক হিন্দু যুবক ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
শাল্লা থানার ওসি নাজমুল হক বলেন, “ওই ঘটনাকে ধর্মীয় উসকানি আখ্যায়িত করে ওই এলাকার মামুনুল হকের অনুসারীরা মঙ্গলবার রাতে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সেই রাতেই ওই যুবককে আটক করে।
“বুধবার সকালে কাশিপুর, নাচনী, চণ্ডিপুরসহ কয়েকটি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামের হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কয়েক হাজার অনুসারী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে নোয়াগাও গ্রামে অতর্কিত হামলা চালায়। হাজারো মানুষের আক্রমণে গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপনে যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এই সুযোগে হেফাজত নেতার অনুসারীরা গ্রামে প্রবেশ করে তছনছ করে। লুটপাট করে বিভিন্ন বাড়িতে।”
তবে ওই হামলার সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের ‘কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই’ দাবি করে সংঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন বলেছেন, “সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে ওই যুবকের বাড়িতে হামলা করেছে।”
বৃহস্পতিবার ওই এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলার পর র্যাব মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, “জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ আমাদের ঘায়েল করতে পারেনি। বড় বড় জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদ যখন আমাদের ঘায়েল করতে পারেনি, তখন এখানকার উগ্রবাদীরা
দীর্ঘদিনের সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করতে পারবে না। বাংলাদেশ অপরাধ দমনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে বিশ্বদরবারে সুনাম অর্জন করেছে। সেভাবে অচিরেই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের কালো হাত ভেঙে দেওয়া হবে।
“এই দেশ হিন্দুদের, এই দেশ মুসলমানদের, এই দেশ সবার। সবাই আমরা মিলেমিশে থাকব। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে সবার সমান অধিকার রয়েছে। কেউ যদি সংখালঘুদের ওপর নির্যাতন করে তা সহ্য করা হবে না।”