নিজস্ব প্রতিবেদক,দিশাডটকমঃ
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের ২০১৭ সালে জলমহাল দখল নিয়ে আওয়ামী লীগ যুবলীগের বন্দুক যুদ্ধে আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের অন্যতম আসামি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জল মিয়া ও সহোদর তাজবির মিয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির দশ মাস পর বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: রাগিব নুরের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আবেদনটি নামঞ্জুর করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আলোচিত ট্রিপল মার্ডার মামলায় গত বছর ৫ অক্টোবর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ৫ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।
সুনামগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (দিরাই) জোন থেকে পরোয়ানা আদেশটি জারি করে মামলাটি অধিকতর
তদন্তের জন্য র্যাব-৯-কে আদেশ দেন।
এ মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা হলেন- দিরাই উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, দিরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান তালুকদার, দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র ও দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া তার দুই ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জল মিয়া ও তাজবির মিয়া। তবে মোশাররফ মিয়া উচ্চ আদালতের জামিনে রয়েছেন। উজ্জল ও তাজবিরের বিরুদ্ধে সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় গত বুধবার দিরাই থানায় আরেকটি মামলা দায়ের হয়েছে।
ট্রিপল মার্ডার মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় কুলঞ্জ ইউনিয়নের জারলিয়া জলমহালের দখলকে নিয়ে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দু‘পক্ষের বন্দুক যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন জেলে নিহত হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চৌদ্দ মাস পর ২০১৮ সালের ১৪ এপ্রিল সিআইডি পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। সিআইডির তদন্তে মামলার ৩৯ আসামির মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা জহিরূল হক কবির। অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেন মামলার বাদি যুবলীগ নেতা একরার হোসেন। সুনামগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (দিরাই) নারাজি আবেদনের শুনানি শেষে বিচারক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান মজুমদার বাদির আবেদনটি গ্রহণ করে পিবিআইকে আবারো তদন্ত রিপোর্টের নির্দেশ দেন। প্রায় ৬ মাস পর পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরওয়ারে জামান তদন্ত শেষে সুনামগঞ্জের আদালতে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। পিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে বাদি একরার হোসেন আবারো নারাজি আবেদন করেন। এ বছর ২১ অক্টোবর নারাজি আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করে আদালত। ওই দিন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিরাই আদালত নারাজি আবেদনটি খারিজ করেন এবং মামলায় অস্থায়ী জামিনে থাকা সাত আসামির মাঝে ছয়জন হাজির হয়ে স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন।
আদালতের বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তারা হলেন- আওয়ামীলীগ নেতা কূলঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহাদ মিয়া, আরিফুজ্জামান চৌধুরী এহিয়া, সাইফুল চৌধুরী, সোহেল চৌধুরী, লিপাস মিয়া ও আকুল মিয়া।
আসামিরা এর আগে ধৃত হয়ে জেলহাজতে থাকা অবস্থায় আদালত থেকে অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। এরপর বাদি একরার হোসেন জেলা দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে আগের সকল আদেশ রদ ও রহিত করে চলতি ব্ছরের ১০ আগস্ট দায়রা জজ ওয়াহিদুজ্জামান শিকদার মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য র্যাবকে দায়িত্ব দিতে নিম্ন আদালতকে আদেশ দেন। অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে মামলাটি আবারো তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেন নিম্ন আদালতের বিচারক। গত বছরের ৫ অক্টোবর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (দিরাই) জোন এর বিচারক শুভদীপ পাল কর্তৃক বহুল আলোচিত মামলার আসামি দিরাই উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, দিরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান তালুকদার, দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র ও দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া, তার দুই ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জল মিয়া ও তাজবির মিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য র্যাব-৯-কে আদেশ দেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় রয়েছে। পরোয়ানা জারির ১০ মাস পর বৃহস্পতিবার উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জল মিয়া ও তার ভাই তাজবির আদালতে আত্মসমর্পণ করে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় জলমহালের দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দু‘পক্ষের বন্দুক যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন জেলে নিহত হয়। এ ঘটনায় দুদিন পর যুবলীগ নেতা একরার হোসেন বাদি হয়ে ৩৯ জনের বিরুদ্ধে দিরাই থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
Abul Hussain, [19.08.21 20:08]
[ Photo ]