বিশেষ প্রতিনিধি
‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিল-২০২০’এর বিল জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় খুশি সুনামগঞ্জবাসী। দক্ষিণ সুনামগঞ্জে বুধবার রাতে আনন্দ মিছিল হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনে জনে অভিনন্দন জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে। সুনামগঞ্জের অন্যান্য সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফোনে গণমাধ্যমে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন সুনামগঞ্জের বিশিষ্টজনেরা।
গত বুধবার (১৮ নভেম্বর) রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের উত্থাপন করেন শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলটি রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হবে। এটি চালু হলে দেশে বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও প্রকৌশল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা হবে ২০টি।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে সংগতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা বিশেষ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক জ্ঞানচর্চা এবং পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতিগত সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জ জেলায় সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ প্রহণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জ জেলায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে ‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়।
খসড়া আইনের ওপর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত গ্রহণ করে গত বছরের ২২ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। বুধবার সন্ধ্যায় এই বিশ^বিদ্যালয় আইনের বিল সংসদে পাস হয়।
সংসদে উত্থাপিত বিলটি অন্যান্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসরণ করে প্রণয়ন করা হয়েছে। সেখানে ৫৫ টি ধারা রয়েছে। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, প্রবর্তন ও সংজ্ঞা ছাড়াও উল্লেখযোগ্য ধারাগুলোর মধ্যে নয় ধারা চ্যান্সেলর, ১০-১১ ধারা ভাইস চ্যান্সেলর, ১২ ধারা প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, ১৩ ধারা কোষাধ্যক্ষ, ১৮-২০ ধারা সিন্ডিকেট, ২১-২২ ধারা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল, ২৯-৩০ ধারা অর্থ কমিটি সম্পর্কিত।
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিল ২০২০ পাসের মাধ্যমে দেশে আরো একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হচ্ছে। বিলে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডকেট ও সিনেট গঠন এবং এর কার্যক্রম, ক্ষমতা, দয়িত্ব, একাডেমিক কাউন্সিল, ভাইস চ্যান্সেলর, উপ ভাইস চ্যান্সেলর, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, শিক্ষক নিয়োগ, অন্যান্য খাতে জনবল নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়, বাজেট, হিসাব রক্ষণ ও নিরীক্ষা, অডিট, বিধি-প্রবিধি প্রণয়নের ক্ষমতাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধান করা হয়েছে।
বিলটির ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ করে দেন সংসদ সদস্যগণ। গত ৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে বিলটি উত্থাপনের পর তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। এর আগে গত ২ মার্চ বিলটি মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আবারও আমাদের নেত্রী প্রমাণ করলেন তিনি হাওরের মানুষকে ভালবাসেন। তিনি জানান, আহসানমারা সেতুর দক্ষিণে দেখার হাওরপাড়ে বিশ^বিদ্যালয় হবে। তিনি শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, এই বিশ^ বিদ্যালয় হবে দেশের অন্যতম আধুনিক উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপীঠ, এখানে নতুন নতুন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করবেন হাওরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকেও শিক্ষক এনে যুক্ত করা হবে এই বিশ^ বিদ্যালয়ে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, এতো বড় পাওয়া, মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত। সংসদে বিল পাস হতেই দক্ষিণ সুনামগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মিছিল হয়েছে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আপ্তাব উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা, তিনি সুনামগঞ্জের মতো প্রান্তিক জেলায় বিশ^ বিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দেওয়ায়। এটি বাস্তবায়ন করার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ায় পরিকল্পনা মন্ত্রী, সুনামগঞ্জের সংসদ সদস্যগণ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের উজানীগাঁওয়ের বাসিন্দা শিক্ষাবিদ আব্দুর রউফ বলেন, হাওরাঞ্চলে অতিতে যারা উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেছে, তাঁরা অতিকষ্টে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওরবাসীর প্রতি সদয় হওয়ায় ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য এই কষ্ট করতে হবে না। সুনামগঞ্জের কৃতী সন্তান পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নানের প্রচেষ্টায় এই অসাধ্য সাধন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সুনামগঞ্জের শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে বলেন, সুনামগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ প্রসারিত হওয়ায় আনন্দিত আমরা। প্রধানমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে কৃতজ্ঞ জেলাবাসী।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক‘র) জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আইনুল ইসলাম বাবলু বলেন, সুনামগঞ্জ জেলাবাসী আনন্দিত, হাওরপাড়ের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার পথ প্রশস্ত হলো। আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রধানমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, সংসদ সদস্যগণসহ রাজনীতিকদের প্রতি।
প্রসঙ্গত. সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর বহুদিনের দাবী সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের খসড়া আইন গত ৩১ ডিসেম্বর সোমবার মন্ত্রী পরিষদের সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদন পায়। এরপর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী’র প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নানের নেতৃত্বে সুনামগঞ্জে বিশাল শোভাযাত্রা হয়।
সুত্র- দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর