ইমরান হোসাইন দিরাই : মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ৭ শত ৪৬ টি বাস্তুহারা পরিবারকে সেমিপাকা ঘর করে দেয়া হচ্ছে। এ মাসেই সুবিধাভোগীদের মাঝে জমিসহ এসব ঘর তুলে দেয়া হবে। মাঠ পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসন বাস্তবায়নাধীন প্রতিটি ঘর নির্মাণ খরচ হবে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকার প্রদান করছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। কিন্তু এসব ঘর নির্মাণ কাজের শুরুতেই উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয়হীনতাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপকারভোগী পরিবারের লোকজনের।
দিরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দিরাই উপজেলার ৯ টি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বাছাই করে ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারে দুই শতাংশ জমিতে ঘর নির্মাণ করা হবে। গেল ডিসেম্বরে দিরাই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। সরেজমিনে ঘর নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপকারী পরিবারগুলোর সাথে আলাপকালে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারস্বরুপ অসহায় পরিবারগুলোকে এসব আশ্রয়স্থল করে দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই মহৎ উদ্যোগে দেশব্যাপী উপকারভোগী পরিবারগুলো ঘর প্রাপ্তির খবরে আনন্দিত হলেও হাওরাঞ্চলের এ জনপদে এর ব্যতিক্রম। এ অঞ্চলের আশ্রয়হীন উপকারভোগির তালিকা তৈরী থেকে শুরু করে প্রতিটি ঘর নির্মাণে ধাপে ধাপে ঘুষ দিতেই হচ্ছে ভূমিহীন পরিবারগুলোকে। তাছাড়া যাদের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে তাদের ঘর নির্মাণে নিম্নমানের ইট, রড, সিমেন্ট, কাঠ ও দরজা জানালায় ষ্টীলের পরিবর্তে হালকা পাতলা প্লেন সীট ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। ফলে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার স্বপ্নের ঠিকানা পেয়ে আশ্রয়হীন এসব মানুষেরা যে পরিমানের আনন্দিত হওয়ার কথা তাদের মাঝে সেই আনন্দের ঝিলিক নাই।
উপকারভোগী রাজানগর ইউনিয়নের রন্নারচর গ্রামের ময়না মিয়ার ছেলে হাম্মাদ মিয়া বলেন, ঘরের তালিকায় নাম তুলতে আমাদের গ্রামের অনেকের কাছ থেকেই নগদ ১০/১৫ হাজার টাকা নিয়েছে পিআইও সাহেব। এবিষয় নিয়ে এলাকায় কথা উঠলে ডিসি সাহেবের (সদ্যবদলীকৃত) নির্দেশ পেয়ে ইউনিয়ন তহশীল অফিসে মিটিং করার পর কিছু টাকা ফেরত দিয়েছেন। একই গ্রামের আব্দুল হকের স্ত্রী রেহেনা বেগম বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পেয়ে খুশি হইছিলাম, কিন্তু ঘর করতে গিয়ে তারা শুধু টাকা নেয়, সাইফুল স্যার ও খুরশেদ স্যার আইসা বলে তোমাদের ঘরে ইট বেশি লাগছে, তিন হাজার টাকা না দিলে ঘরের কাজ আটকে দেয়। নিম্নমানের ইট দেয় ভালো ইট দিতে হলে লাদেনের ইট খলার কর্মচারী মকদ্দুস ১ হাজার টাকা দাবি করে পরে সুদে এনে পাঁচ শত টাকা দিয়েছি।’ এরকম অভিযোগ প্রায় প্রতি উপকারভোগী পরিবারের। ভূমিহীন রেনু বেগম বলেন, তিন নাম্বারের থেকে খারাপ ইট দিয়ে ঘর করছে, হাত থেকে পড়লে ভেঙে যায়। একটি ঘরে প্রথমে ৫ হাজার ইট দিয়েছে পরে তারা কমিয়ে ৪ হাজার করে দিছে। আমাদের থেকে ঘর নির্মাণে মেস্তরির মজুরি ১৮ হাজার টাকাসহ আরো অনেক টাকা নিচ্ছে তারা। রাজ মেস্তরি সুহেল মিয়া জানান, সরকারি ঘরে নিম্নমানের যে সব ইট লাগানো হচ্ছে তা দিয়ে আমাদের গ্রামের কোন মালিক ঘর নির্মাণ করেনা। প্রতি ঘরে মজুরি দিচ্ছে মাত্র ১৮ হাজার টাকা। পিআইও প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সে নিজেকে একটি জাতীয় দৈনিকের ঢাকা অফিসের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে জানান আমরা কাজ সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারি নিয়েছি। আমরা উপকারভোগিদের কাছ থেকে টাকা নেইনি। তবে যেসব ঘরে ইট বেশি লাগছে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ইটের টাকা নিয়ছি।
রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শফিকুল হক বলেন, কয়েক দিন আগে সহকারী কমিশনার( ভূমি) আমাকে মোবাইলে ডেকে এনে আমার ওয়ার্ডে সাতটি ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে প্রতিবেদনের কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। এ ছাড়া আর কিছুই জানিনা, তবে শুনেছি খুব নিম্নমানের ইট দিয়ে এসব করা হয়েছে। রন্নারচর গ্রামের ইউপি সদস্য জগদীশ চন্দ্র দাস বলেন, এসিল্যান্ড আমাকে কল করে কিছু দস্তখত দিতে বলেছিলেন কিন্তু আমার ওয়ার্ডে ঘর হচ্ছে আমি কিছুই জানিনা, তাই আমি দস্তখত দেইনি।
দিরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলেন, আমি কারো কাছ থেকে কোন টাকা নেইনি। এসব ভূয়া কথা। যথাযথ নিয়মেই ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ সঠিক নয়। দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন বলেন, ১০০ টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে, ৪০টি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২৩ জানুয়ারী কাগজপত্রসহ উপকারভোগিদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আমি ২০/২৫ দিন হয়েছে দিরাইয়ে যোগদান করেছি,কোন অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।