হাওরাঞ্চলে নির্মিত হবে ৫৫০টি ‘মুজিব কিল্লা’

দিশা ডেস্ক:

সুনামগঞ্জসহ দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা বর্ষায় ডুবে থাকে। চারদিকে থৈথৈ জল। এ সময়ে হাওরাঞ্চলের মানুষের চলাচল বিড়ম্বিত হয়। তবে মানুষ নানাভাবে নিজেদের পথ তৈরি করে নিলেও গবাদিপশু নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন কৃষকরা। চারদিক ডুবে থাকার কারণে গোখাদ্য নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় থাকেন তারা। বিশেষ করে বন্যা হলে দুর্ভোগের অন্ত থাকেনা। তাছাড়া ধান কাটার সময়ে মাড়াইয়ের ব্যবস্থা ও ধান শুকানোর ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষক। হাওরাঞ্চলের কৃষকের এই চিরায়ত সমস্যাগুলো দূর করতে সরকার হাওরাঞ্চলে ‘৫৫০টি মুজিব কিল্লা’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। ভাটির বিস্তৃত বিভিন্ন হাওরে ‘৫৫০ মুজিব কিল্লা’ মাথা উঁচু করে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণের পাশাপাশি হাওরের লাখো কৃষককে চিরন্তন দুশ্চিন্তা থেকেও মুক্তি দিবে। গত বুধবার (১৭ জুলাই) রাতে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থানা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ কথা জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। ডিপিপি সম্পন্ন হয়েছে। এখন প্রকল্প পাস করে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাওয়া হবে। এই কিল্লা বর্ষায় কৃষকের দুশ্চিন্তার সময়ে গবাদি পশু চারণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় ফ্লাড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন দুর্গত মানুষজন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সাবেক জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম হাওরের কৃষকদের এই দুশ্চিন্তার বিষয়টি অবগত হয়ে ২০১৮ সনে হাওরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিল্লা’ নামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী খননের মাটি দিয়ে হাওরাঞ্চলে এই কিল্লা নির্মাণের পরিকল্পনা নেন। ওই সময় সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউসে একটি সভায় এই পরিকল্পনার কথা জানান জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া। জানা গেছে, প্রায় এক বছর পরে এই প্রকল্পটি আরো সংস্কার করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। জলবায়ু তহবিলের টাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় হাওরের দুর্গম স্থানগুলোতে এরকম ৫৫০টি মুজিব কিল্লা উঁচু করে স্থায়ীভাবে তৈরি করবে। এতে বর্ষায় গবাদি পশু চারণের পাশাপাশি দুর্গত মানুষ আশ্রয়ও নিতে পারবেন। বৈশাখে ফসল কাটার মৌসুমে এই কিল্লায় ধান মাড়াইসহ ধান শুকানোর কাজও করতে পারবেন কৃষক।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গবেষক অ্যাডভোকেট কল্লোল তালুকদার বলেন, বঙ্গবন্ধু সত্তরের নির্বাচনে দুইবার হাওর সফর করে হাওরবাসীর সমস্যা নিজ চোখে দেখে তা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। হাওরের সম্পদ পাকিস্তান সরকার কর্তৃক লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে তিনি জনগণকে সংগঠিত করেছিলেন এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে সমর্থন দানের অনুরোধ জানিয়েছিলন। হাওরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নদী খনন নিয়েও তিনি সভা-সমাবেশে কথা বলেছিলেন। মহান এই নেতার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য মুজিব কিল্লা বাস্তবায়ন নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
সুনামগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, মুজিব কিল্লা নির্মাণে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। পাউবো হাওরাঞ্চলে নদী খনন করে যে মাটি পাচ্ছে তা কাজে লাগিয়েই আমরা এই কিল্লা করতে চেয়েছিলাম। তারপরে আমি চলে আসায় এটা কোন পর্যায়ে ছিল আমি জানিনা। তবে এটা বাস্তবায়ন হলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বিরল শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পাশাপাশি হাওরের কৃষকদের গোচারণের স্থায়ী সমস্যার সমাধান হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, বঙ্গবন্ধু কিল্লা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। এগুলো নির্মিত হলে হাওরে বিরাট পরিবর্তন আসবে। মওসুমে ধান মাড়াই, ধান শুকানো এবং বর্ষা মওসুমে গোচারণসহ দুর্গত লোকজন আশ্রয়ের সুযোগ পাবেন।