বিশেষ প্রতিনিধি
অপেক্ষাকৃত রাজনৈতিক সচেতন, প্রয়াত রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের শহর হিসাবে পরিচিত দিরাই পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী মোশারফ মিয়া। তিনি দলের পরিচয়েই প্রচারণা চালাচ্ছেন, দলের এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীদের অনেকে তার পক্ষে প্রচারণায়ও নেমেছেন। দলের এমন বিশৃঙ্খল অবস্থায় আজ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শফিক দিরাইয়ে এসে বিদ্রোহী প্রার্থী মোশারফ মিয়ার বিরুদ্ধে দলের কঠোর সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেবেন বলে দলীয় দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন।
স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে স্থানীয় নির্বাচন থেকে জাতীয় নির্বাচনে দিরাই-শাল্লার ভোটকে গুরুত্ব দিয়ে আসছেন সকলে। এখানে ভোট হয় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই। আগামী ২৮ ডিসেম্বর দিরাই পৌরসভা নির্বাচন। নির্বাচনে মেয়র পদে ৮, কাউন্সিলর পদে ৩৯, সংরক্ষিত নারী আসনে ১৩ জন লড়ছেন। মেয়র পদে দিরাই পৌরসভার বর্তমান প্যানেল মেয়র দিরাই ডিগ্রি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি বিশ^জিৎ রায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপি প্রার্থী করেছে উপজেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন চৌধুরীকে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক মোশারফ মিয়া, দিরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কদ্দুছ মিয়ার ভাই বিএনপি নেতা আব্দুল কাইয়ুমও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা হাফিজ লোকমান আহমদ, জাতীয় পার্টির প্রার্থী অনন্ত মল্লিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিক মিয়া ও রশিদ মিয়া ভোটে লড়ছেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে বর্তমান পৌর মেয়র দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে। বিদ্রোহী প্রার্থী মোশারফ মিয়ার পক্ষে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতা কর্মীকেও প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে।
দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজ উদ- দৌলা তালুকদার বললেন, উঠোন বৈঠক থেকে শুরু করে সব কিছুতেই মোশারফ মিয়া নিজেকে দলের প্রার্থী পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলছেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্র ও জেলা সকল ক্ষেত্রেই আমার মানুষ আছে। আমাকে মনোনয়ন না দিলেও ২৮ ডিসেম্বরের পর দল আমিই করবো। তখন দেখে নেব, এখন যারা বিরোধীতা করছে তাদের।
দিরাই পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান বুলবুল বললেন, বিদ্রোহী প্রার্থী মোশারফ মিয়া দলের শৃঙ্খলা নষ্ট করে দিচ্ছেন। তিনি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, দলীয় কর্মীদের ভয়ভীতিও দেখাচ্ছেন। তিনি বলেন, জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে লিখিতভাবে এসব বিষয় জানানো হয়েছে।
বিদ্রোহী প্রার্থী মোশারফ মিয়া দলীয় কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়টি সত্য নয় দাবি করে বললেন, আমি কাকে ভয়ভীতি দেখাবো, দলের এবং যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা আমার সঙ্গেই প্রচারণায় আছে। সংগঠনকে ভুল বুঝিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাঁর ভাইকে মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছেন, আমি ভোটারদের জানাচ্ছি এবং আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির শোকজের জবাবে সেটি উল্লেখ করেছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন এ প্রসঙ্গে বলেন, দিরাই পৌরসভায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে। তিনি শোকজের যে জবাব দিয়েছেন, তা সন্তোষজনক হয় নি। আমরা শোকজ এবং তার জবাব কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের কাছে জমা দিয়েছি। কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সোমবার দিরাইয়ে গিয়ে এই বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন।
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শফিক বললেন, সোমবার সকালে দিরাইয়ে পৌঁছাবো। বিদ্রোহী প্রার্থী ও নেতা কর্মীদের দলের কঠোর সিদ্ধান্তের কথা জানাবো।
দিরাই পৌরসভায় ২১ হাজার ৩৭৯ জন ভোটারই ২৮ ডিসেম্বর ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দেবেন।
প্রসঙ্গত. দিরাই পৌরসভার বর্তমান মেয়র ২০১৭ সালে দিরাইয়ের জলমহালে সংগঠিত ৩ খুনের মামলার আসামী। পৌর নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের এক দিন আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন তিনি।
সুত্র: দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর