শাল্লায় পিআইসি গঠন নিয়ে শঙ্কিত কৃষক

পি সি দাশ  : সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলায়  এগিয়ে চলেছে হাওর রক্ষা বেড়ি বাঁধ নির্মাণ কাজের  জরিপ কাজ। গত ১৯ নভেম্বর উপজেলা কাবিটা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভায় সংশ্লিষ্টদের বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত কাজ এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বিষদ আলোচনা হয়।

উপজেলার অধিকাংশ হাওরে পানি থাকায় যথাসময়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরুর ব্যাপারেও শঙ্কা প্রকাশ করেছে পাউবো। অন্যদিকে পিআইসি গঠন নিয়েও শঙ্কিত কৃষক।
জেলা পর্যায়ে বাঁধ নির্মাণ কাজে প্রথম পর্যায়ে ৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দের পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।  জরিপ ও প্রকল্প নির্ধারণের পর এ ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন প্রক্রিয়া ও প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এলাকার কৃষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ। বিগত বছর পিআইসিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের অপ্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ থাকায় এ বছরও এ রকম হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তাদের দাবি পিআইসি গঠনের ক্ষেত্রে স্ব-স্ব ইউনিয়নের হাওর পারস্থ কৃষকের সাথে আলোচনা করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া প্রকল্প কমিটি গঠন স্থানীয়ভাবে গণশুনানির মাধ্যমে উপজেলায় বসে করার পক্ষে মত দিয়েছেন অনেকে।
২০১৭ সালে ফসল বিপর্যয়ের পর বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে ঠিকাদার ও পিআইসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়। পরে হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে নতুন নীতিমালা হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করে সরাসরি যুক্ত করা হয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় কৃষককে। তবে স্বচ্ছতার স্বার্থে ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করা হলেও পিআইসি গঠনে অব্যাহত রয়েছে সেই পুরোনো খেলা।
২০১৭ সালের ফসলহানিতে অভিযুক্ত পলাতক জনপ্রতিনিধিসহ চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের পিআইসি প্রধান কিংবা পরোক্ষভাবে পিআইসিতে যুক্ত করার বিষয়টি বিগত বছরের মতো এবারও ভাবিয়ে তুলেছে কৃষকসহ সাধারণ মানুষকে। একদিকে অভিযুক্তদের পিআইসিতে না রাখার কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে বিতর্কিতদের কোন না কোনভাবে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ তো আছেই। সব মিলিয়ে স্বস্তিতে নেই হাওর পারের অগণিত কৃষক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
এব্যাপার  কৃষক  একরামুল হোসেন বলেন, ‘চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ তাদের পছন্দের মানুষ অর্থাৎ যাদের কোন জমিজমা নাই তারাই মূলত পিআইসির কাজ পায়। কৃষকদের কথা শুধু মুখেই বলা হয়। কিন্তু অনেক বাঁধে প্রকৃত কৃষককে বাঁধের কাজে সম্পৃক্ত করা হয় না। আমরা চাই প্রতিটি ইউনিয়নের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের সাথে সভা করে তাদের মতামতের ভিত্তিতেই যেন পিআইসি করা হয়।’তিনি আরো বলেন প্রতিবারেই একেই পিআইসিকে কাজ না দিলে ভাল হয়।
হাওর বাঁচাও, সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সদস্যরা দাবী ‘করে বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় নির্দেশ অনুযায়ী আমরা প্রতি বছরই ডিসেম্বরের ৫ তারিখের মধ্যে বাঁধ এবং বেড়িবাঁধের প্রয়োজনীয়তা নির্ণয় করি। অনেক বাঁধ এখনও পানির নীচে থাকায় পাউবো কিভাবে সঠিক জরিপ চালাবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কৃষকের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে যেন পিআইসি গঠন করা হয়।