দিশা ডেস্কঃ
১১ বছর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে রচিত হয় ‘পিলখানা ট্রাজেডি’ নামে কালো দিন। সেদিন পিলখানার সাবেক বিডিআর ও বর্তমান বিজিবি সদর দফতরে ঘটে গিয়েছিল এক মর্মান্তিক নৃশংস ঘটনা।
তখন সকাল ৯টা ২৭ মিনিট। দরবার হলে চলমান বার্ষিক দরবারে একদল বিদ্রোহী বিডিআর সৈনিক ঢুকে পড়ে। সিপাহী মঈন নামে একজন বিডিআর সদস্য মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। এরপরই ঘটে যায় ইতিহাসের সেই নৃশংসতম ঘটনা।
বিডিআরের বিদ্রোহী সৈনিকরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে। পুরো পিলখানায় এক ভীতিকর বীভৎস ঘটনার সৃষ্টি করে।
এ সময় তারা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বিজিবি’র সদর দফতর পিলখানায় সেদিন বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা যে তান্ডব চালিয়েছিল, তা পৃথিবীর কোনও বাহিনীর বিদ্রোহের ইতিহাসে পাওয়া যায় না। পিলখানায় নারকীয় হত্যার ঘটনায় দায়ের করা হয় দুটি মামলা। এর মধ্যে সেনা কর্মকর্তাদের নিহতের ঘটনায় দণ্ডবিধি আইনে করা হয় হত্যা মামলা। অপরটি হয় বিস্ফোরক আইনে। বিস্ফোরক আইনের মামলাটির বিচার শেষ হয়নি ১১ বছরেও।
দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের দেয়া ১৫২ জনের মৃত্যুদন্ড দেয়। পরে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদন্ডরে রায় বহাল রাখা হয়। ৮ জনের মৃত্যুদন্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও ৪ জনকে খালাস দেয়া হয়। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলার সময়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়। খালাস পান ১২ জন আসামি।
বিস্ফোরক আইন করা মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলায় আসামি রয়েছেন ৮৩৪ জন। এর মধ্যে একজন সিভিলিয়ান, বাকি আসামিরা বিডিআরের জওয়ান। এই মামলায় আসামিদের মধ্যে ২৪ জন মারা গেছেন। জীবিত আসামি ৭৯০ জন। পলাতক রয়েছেন ২০ জন আসামি। এই মামলায় ১৪৬ জন সাক্ষী দিয়েছেন। এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রায় ১২ শত সাক্ষী রয়েছে। আগামী ৮ মার্চ পরবর্তী সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
মামলার বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়া প্রসঙ্গে এই মামলার আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ বাহারুল ইসলাম বলেন, বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। তবে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে খুব একটা উপস্থিত হচ্ছেন বলে এর বিচার প্রক্রিয়া ধীর গতিতে হচ্ছে। তবে এই মামলায় সব সাক্ষী প্রয়োজন নেই। মোটামুটি একটা পর্যায়ে গেলেই এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আশা করছি এ বছরের মধ্যে এই মামলার রায় দেয়া সম্ভব হবে।