ডেস্ক নিউজঃ
হাওরাঞ্চলে ইতোমধ্যে কৃষকের ঘরে ধান উঠতে শুরু করেছে। বিভিন্ন উপজেলায় বেশ জোরেশোরে ধান কাটাও চলছে। গত শনিবার কৃষিমন্ত্রী সরকারি বাসভবন থেকে এক ভিডিও বার্তায় জানান সুনামগঞ্জে ৪৮ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। এরই মধ্যে আজ রবিবার থেকে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কেনা শুরু হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে এবার দ্বিগুণ করা হয়েছে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা।
জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে আট লাখ টন বা দুই কোটি মণ ধান কিনবে সরকার। প্রতি মণ ধানের দাম প্রায় ১ হাজার ৪০ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে চলতি বোরো মৌসুমে সরকারের কাছে প্রায় ২ হাজার ৮০ কোটি টাকার ধান বিক্রি করবেন সারা দেশের কৃষক। এ কার্যক্রম চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
আসন্ন বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জ জেলা থেকে ২৫ হাজার ৮৬৬ মেট্রিক টন পরিমাণ ধান সংগ্রহ করবে সরকার। এজন্য তালিকা প্রকাশ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। জেলার পাশাপাশি উপজেলা ভিত্তিক তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যে ধর্মপাশা উপজেলা থেকে ৩ হাজার ৮শত ৩৩ মেট্রিক টন , তাহিরপুর ২ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন , জামালগঞ্জ ২ হাজার ৮শত ২৮ মেট্রিক টন , দিরাই ৩ হাজার ৬শথ ৮২ মেট্রিক টন , শাল্লা ১ হাজার ৪শথ ০৩ মেট্রিক টন , জগন্নাথপুর ২ হাজার ৬শত ৮ মেট্রিক টন , দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ২ হাজার ৭শত ৭৫ মেট্রিক টন , সুনামগঞ্জ সদর ১ হাজার ৯শত ৯০ মেট্রিক টন , বিশ্বম্ভরপুর ১ হাজার ২শত ৯৪ মেট্রিক টন , ছাতক ১ হাজার ৮শত ২ মেট্রিক টন এবং দোয়ারাবাজার উপজেলা থেকে ১ হাজার ৫শত ৭৪ মেট্রিক টন পরিমাণ ধান সংগ্রহ করবে সরকার।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে আরো জানা যায়, জেলায় সম্ভাব্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১২ লক্ষ ৩০ হাজার ৯শত ৩৪ মেট্রিক টন। এরমধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ধানের সম্ভাব্য উৎপাদনের আকার ৯৪ হাজার ৭ শত ২৪ মেট্রিক টন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ১ লক্ষ ৩২ হাজার ১৮ মেট্রিক টন, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৭৪ হাজার ৮শত ৮৮ মেট্রিক টন , ছাতক উপজেলায় ৮৫ হাজার ৭শত ৫৪ মেট্রিক টন , জগন্নাথপুর উপজেলায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার ১শত ৩১ মেট্রিক টন , দিরাই উপজেলায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজর ২শত ৪০ মেট্রিক টন, শাল্লা উপজেলায় ৬৬ হাজার ৭শথ ৫৩ মেট্রিক টন, ধর্মপাশা উপজেলায় ১ লক্ষ ৮২ হাজার ৪শত ৯ মেট্রিক টন, জামালগঞ্জ উপজেলায় ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৫শত ৯২ মেট্রিক টন, তাহিরপুর উপজেলায় ৯৮ হাজার ৮শথ ২৭ মেট্রিক টন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৬১ হাজার ৫শত ৯৮ মেট্রিক টন।
এছাড়াও প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, সিলেট জেলা থেকে পাঁচ হাজার ৯৯৩ মেট্রিক টন, মৌলভীবাজার জেলা থেকে ছয় হাজার ৬১৮ মেট্রিক টন ও হবিগঞ্জ জেলা থেকে ১৫ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। এরমধ্যে সিলেট জেলার উপজেলা ভিত্তিক হিসেব হল, সিলেট সদর ৪১১, বিশ্বনাথ ৫৩৪, ওসমানীনগর ৫৯৮, দক্ষিণ সুরমা ৪২৩, বালাগঞ্জ ৪৪৮, ফেঞ্চুগঞ্জ ২৭৯, কোম্পানীগঞ্জ ৪২৯, গোয়াইনঘাট ৫৯৪, জৈন্তাপুর ৩৭৫, কানাইঘাট ৫৫৪, জকিগঞ্জ ৪৮৯, বিয়ানীবাজার ৪৩৬ এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলা থেকে ৫২৩ মেট্রিক টন পরিমাণ ধান সংগ্রহ করবে সরকার। মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে জুড়ী উপজেলায় ৬৮২, বড়লেখা ৫৫৭, কুলাউড়া ৮৪৭, রাজনগর ১ হাজার ৬৭৪, মৌলভীবাজার সদর ১ হাজার ২০৫, শ্রীমঙ্গল ১ হাজার ১৪৮ এবং কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে ৫০৫ মেট্রিক টন পরিমাণ ধান সংগ্রহ করবে সরকার। হবিগঞ্জ জেলার মধ্যে নবীগঞ্জ উপজেলা থেকে ২ হাজার ৩১৮, বাহুবল ১ হাজার ৯৯, আজমিরিগঞ্জ ২ হাজার ২০, বানিয়াচং ৪ হাজার ৭১৬, হবিগঞ্জ সদর ১ হাজার ৫৫০, লাখাই ১ হাজার ৫০৯, চুনারুঘাট ১ হাজার ১৭৫ এবং মাধবপুর উপজেলা থেকে ১ হাজার ৪১৪ মেট্রিক টন পরিমাণ ধান সংগ্রহ করবে সরকার। তবে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা থেকে কোন ধান সংগ্রহ করা হবে না।
এরপর ৭ মে থেকে শুরু হবে ৩৬ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল কেনা। একইসঙ্গে ৩৫ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ টন আতপ চাল এবং ২৮ টাকা কেজি দরে ৭৫ হাজার টন গম কেনা হবে।
ধান কেনায় স্বচ্ছতার বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। সম্প্রতি বেশকিছু জেলায় ধান কাটা পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। ধানে কৃষককে মুনাফা দেয়ার জন্য প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধান কেনায় কোনো ধরনের অনিয়ম যাতে না হয়, সেজন্য মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ সচেতন থাকবেন। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ের কমিটিকে আরো দক্ষতার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সত্যিকারের কৃষক যারা, তারা হাজার টাকার বেশি মণে ধান বিক্রি করতে পারলে বেশ লাভবান হবেন। তারা পরবর্তী সময়ে শস্য আবাদে উৎসাহিত হবেন।
উল্লেখ্য, প্রাথমিকভাবে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষক ও অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে বোরো মৌসুমে ৮ লাখ টন ধান, ১০ লাখ টন চাল, ২ লাখ ২০ হাজার টন আতপ ও ৮০ হাজার টন গম সংগ্রহের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার ২১ লাখ টন ধান-চাল ও গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। মিলারদের কাছ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন চাল, ৩৫ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া ২৮ টাকা দরে প্রায় ৭৫ হাজার টন গম কেনা হবে। চাল সংগ্রহ আগামী ৭ মে থেকে সংগ্রহ শুরু হয়ে চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। তবে ১৫ এপ্রিল থেকে গম কেনা শুরু হয়ে চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত