হবিগঞ্জ : সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার পেরিয়ে গেছে ১৫ বছর। বারবার পেছাচ্ছে সাক্ষ্যগ্রহণ। বিচার কার্যক্রম শেষ হতে এক যুগের বেশি সময় পার হওয়ায় আশা হারিয়েছেন ওই হামলায় নিহত ও আহতদের পরিবার। কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়ার দাবি, মামলার তদন্ত সুষ্ঠু হয়নি। তাই সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২৭ জানুয়ারি। ২০০৫ সালের এই দিনে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন কিবরিয়াসহ পাঁচ নেতাকর্মী। আহত হন কমপক্ষে ৭০ জন।
এ ঘটনায় করা দুটি মামলার একটিতে তিন দফা তদন্ত শেষে চার্জশিট গঠনের মাধ্যমে সিলেট দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৫ সালে। এরপর গত পাঁচ বছর ধরে চলছে সাক্ষ্যগ্রহণ। বিচারপ্রক্রিয়ার এ দীর্ঘসূত্রতা ও তদন্ত প্রক্রিয়ার প্রথম থেকেই অনাস্থা জানিয়ে এসেছেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এ সংসদের পরিবারের সদস্যরা। তবে এখনো আশাবাদী মামলার বাদী ও আইনজীবীরা।
২৭ জানুয়ারি বিকালে বৈদ্যের বাজারে ঈদ-পরবর্তী ওই জনসভায় গ্রেনেড হামলায় আরও নিহত হন কিবরিয়ার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী।
ওই রাতেই হবিগঞ্জ সদর থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন তৎকালীন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান।
কিবরিয়ার ছেলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘এ মামলায় এই মুহূর্তে আমরা আশাবাদী না। কারণ আমরা এখনো বিশ্বাস করি, সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে মামলাটা পরিচালিত হচ্ছে না। আমরা বারবার যেটা বলছি, তদন্ত যদি ঠিকমতো না হয় তাহলে মামলা পরিচালনা সুষ্ঠু করা সম্ভব না। যেসব চার্জশিট করা হয়েছে সেগুলো একটার সঙ্গে আরেকটার কোনো মিল নেই। যে যার মতো করে তদন্ত করছে। কারও শেখানো কথাগুলো চার্জশিটে লিখে দেয়া হচ্ছে।’
আসল তথ্য এই মামলার মাধ্যমে জানা যাবে না দাবি করে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘সে জন্য এ ব্যাপারে আমরা আশাবাদী না। বর্তমান সরকারের আমলে আমার পিতাসহ বাকিদের হত্যার বিচার আমরা পাব না। ভবিষ্যতের আশায় আছি।’
তবে মামলার বাদী ও হবিগঞ্জ-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খান আশা করছেন দ্রুতই মামলার কাজ শেষ হবে। দীর্ঘসূত্রতা বিভিন্ন আইনগত জটিলতার কারণে হচ্ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তো কোনো তদন্তই হচ্ছিল না।
সাংসদ আব্দুল মজিদ খান বলেন, ‘আমি মামলার বাদী, আমি চাই বিচার তাড়াতাড়ি শেষ হোক। আমি সরকারি দলের এমপি। সরকারের লোক এবং আমার লোক নিহত হয়েছেন। আমার প্রত্যাশা তাড়াতাড়ি শেষ হবে।’
বিচার কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট কিশোর কুমার কর আসামিদের আদালতে অনুপস্থিতির কথা বলেন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে। আরও অনেক মামলার আসামি থাকায় তাদের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় প্রতিনিয়ত যেতে হয়। আর এ কারণে সব সময় উপস্থিত থাকা সম্ভব হয় না। আসামির অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণও হয় না বলে বারবার তারিখ পেছাতে হয়।’ মামলার আগামি সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি বরে জানান তিনি।
অ্যাডভোকেট কিশোর কুমারের তথ্যমতে, এ মামলায় ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
কিবরিয়াসহ পাঁচ হত্যা মামলার মোট ৩২ জন আসামির মধ্যে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ তিনজনকে ইতোমধ্যে অন্য মামলায় মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে। বাকি ২৯ আসামির মধ্যে বিএনপি সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ ১০ জন জেলে, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জিকে গউছসহ ১২ জন জামিনে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরীসহ ৭ জন পলাতক।
এদিকে হত্যা মামলায় চার্জশিট হলেও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলাটি হবিগঞ্জ দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে বিচারিক কার্যক্রমের প্রক্রিয়াধীন থাকার পর সিলেট দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এ মামলার অভিযোগপত্র গঠন করা হয়নি বলে জানা গেছে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীতে বরাবরই ঢাকা ও হবিগঞ্জে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়ে থাকে। এবারও ঢাকার বনানীতে মরহুমের সমাধিতে সকাল ৯টায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করে কিবরিয়া পরিবার।