বিশেষ প্রতিনিধি
ভাটি অঞ্চলে এবার ‘কলকা ঢেউয়ে’ বাড়ি ভাঙছে বেশি। জেলার শাল্লা উপজেলার হাওরপাড়েরই কমপক্ষে ২০০০ পরিবার বাড়ি ভাঙন ঠেকাতে লড়াই করছেন। ভাটি অঞ্চলের উপজেলা তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, দিরাই ও জগন্নাথপুরের কোন কোন এলাকায় একই অবস্থা।
শাল্লা উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের আব্দুশ শহীদ জানালেন, আফালের তা-বের সময় (হাওরে বেশি বাতাস হলে যে ঢেউ ওঠে) টিন বাশ দিয়ে আটকানোর চেষ্টা হয়, কিন্তু কলকা ঢেউ আটকানোর সাধারণত চেষ্টা করা হয় না। তিন দফা বন্যায় এবার বাড়ি’র মাটি একেবারে নরম হয়ে যাওয়ায় কলকা ঢেউয়েই ক্ষতি করছে বেশি।
আনন্দপুরের প্রতাপ রায় বলেন,‘ছায়ার হাওরের পাড়ে বাড়ি আমরা’র, তিন দফা বন্যায় বাড়ি’র মাটি নরম অইগেছে, পশ্চিমা ও দইখনাল বাতাস অইলেই ডর করে, বাতাস বেশি অইলে ঢেউ উপরে ওঠে। উপরে দিয়া কোন লাখান কলম, খের, কচুরিপানা দিয়া আটকাইবার চেষ্টা করছি। এরপরেও ভাঙছে, ইবারের লাখান অতপানি অতদিন এর আগে কোন দিন দেখছি না, অখন কচুরিপানাও পাই না, কলকা ঢেউয়ে অখন নিচেদি ভাঙিলার, উপরে দিয়া ভাইঙা ভাইঙা পইরা বাড়ি আটি যার।’
প্রতাপ রায় বুঝাতে চেয়েছিলেন, তিন দফা বন্যার পানিতে টইটুম্বুর হাওরের পানি নামছে ধীরগতিতে। বাড়ির মাটি নরম হয়ে আছে, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকের বাতাস হলেই ভাঙছে বেশি। বাতাস বেশি হলে ঢেউ উপরে ওঠে, ওই ঢেউয়ের ভাঙন ঠেকানোর জন্য টিন, কচুরিপানা, বন দিয়ে রেখেছেন বাড়ি’র চার পাশে। কিন্তু বাতাস কম থাকলেও
বাড়ি’র মাটি নরম থাকায় এবার বাড়ি ভাঙছে এবং এই ভাঙন ঠেকাতেও পারছেন না তারা।
আনন্দপুর গ্রামের আলম মিয়া জানালেন, তাদের গ্রামেরই কমপক্ষে ১০০ বাড়ির বশতঘর ঢেউয়ের ভাঙনের শিকার। এছাড়া আশপাশের গ্রাম হবিবপুর, আনন্দপুর, নিয়ামতপুর, আঙ্গাউড়া, সুখলাইন ও মুক্তারপুরের অনেক বাড়ি ঢেউয়ে ভাঙছে এবার।
শাল্লা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল- আমিন চৌধুরী বললেন, দমকা বাতাস হলে আধাঘণ্ঠা থাকে। এই বাতাসকে এখানকার মানুষ ‘আফাল’ বলেন। যতখান ভাঙে ভাইঙা যায়। কিন্তু কলকা ঢেউ অর্থাৎ কম বাতাসেও এবার সেকেন্ডে সেকেন্ডে ২৪ ঘণ্টা ভাঙছে। তাঁর উপজেলায় ২০০০’এরও বেশি বাড়ি এবার ঢেউয়ে ভাঙছে দাবি করেন তিনি। আলমিন চৌধুরী মনে করেন, ভাটি এলাকার এ ধরণের গ্রামগুলোকে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার প্রোটেকশনের ব্যবস্থা না করলে মানুষ হাওরপাড়ে থাকতে পারবে না।
দৈনিক দিরাই শাল্লা
৬:১২ অপরাহ্ণ