আবু হানিফ চৌধুরীঃ
সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লা উপজেলায় দেখা দিয়েছে বন্যা। এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। তলিয়ে গেছে নিচু এলাকায় বসতি স্থাপনকারী সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি। কিছু পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষেরা।
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলায় বহমান কালনী নদীর পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সোমবার (২৯ জুন) দিবাগত রাত থেকে হাওরের পানি উপচে বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দিরাই পৌর সদরসহ উপজেলা দু’টির ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বানের পানিতে ভেসে গেছে অনেক মৎস্য খামারির পুকুরের মাছ।
দিরাই উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শরিফুল আলম জানান, এ পর্যন্ত বন্যায় ৬৭টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৯০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা মনে করছি।
শাল্লা উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মামুন আহমেদ জানান, এ পর্যন্ত তাঁর উপজেলায় ৭টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করা হচ্ছে।
দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান তালুকদার জানান, তাঁর ইউনিয়নের তেতৈয়া, হাতিয়া, কুলঞ্জ, তারাপাশা, রাড়ইলসহ বিভিন্ন গ্রামে বন্যার পানি উঠেছে। হাতিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে কিছু পরিবারকে নিয়ে আসা হয়েছে।
জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিবলী আহমেদ বেগ জানান, তাঁর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামেই বানের পানি উঠেছে। আক্রান্ত পরিবারগুলো তাদের গবাদিপশু আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অনেকে ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চাইছেন না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপজেলা সমন্বয়কারী রিপন আলী জানান, আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত কালনীর পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেলা শহর দিয়ে বহমান সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার অনেক উপরে রয়েছে। সেই পানি একদিক দিয়ে নামছে। যে কারণে বৃষ্টি না হলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।
দিরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সফি উল্লাহ জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তাৎক্ষণিক সহযোগিতার জন্য জিআরের ৪৫০ মেট্রিকটন চাল ও ২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে।
শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আল আমিন চৌধুরী জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। মনিটরিং সেলের মাধ্যমে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা পরিষদ প্রস্তুত রয়েছে।