পি সি দাশ, শাল্লা
সুনামগঞ্জের দুর্গম উপজেলা শাল্লায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় (পিআইও) এর দায়িত্বশীলরা অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো নির্মাণ করে সরকারের বহু টাকা অপচয় করছেন। হাওরের তলানির উপজেলা শাল্লার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না থাকার কারণে সরকারের উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাদের আগমন কম হয়। এই সুযোগ নেয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তারা প্রত্যন্ত এলাকায় উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ করে।
২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের নামে উপজেলায় ৩৪ ফুট থেকে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ৬ টি ছোট সেতু দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়।
এই ৬ সেতু’র ৩ টিই এখন অকেজো । আবার ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে নির্মিত ১৪ থেকে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ৪ টি সেতু’র দুই টিকেই অপ্রয়োজনীয় বলছেন এলাকাবাসী। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরেও কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩৪ থেকে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ৩ টি সেতু’র ২ টি অপ্রয়োজনীয়।
সর্বশেষ ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরেও কয়েক কোটি টাকার ৬ টি সেতুর মধ্যে ২ টি কোনো কাজে লাগে নি।
এসব অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করে অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি বর্ষায় নৌ দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটছে। সরজমিনে দেখা যায়, হবিবপুর হাওরে সড়ক বিহীন ১ টি সেতু নির্মাণ হয়েছে, সেটির দুই পাশে মাটি নেই, দেখলে মনে হয় অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে আছে। একইভাবে সুখলাইন নতুনহাটির সামনে মাত্র ২ লাখ টাকায় যেখানে সড়ক হয়, সেখানে অহেতুক সেতু বানিয়ে ২৩ লাখ টাকার অপচয় করা হয়েছে। একইভাবে এবারও মামুদনগরে ২টি সেতু নির্মাণ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সেখানে ১টি ছোট সেতু নির্মাণ হচ্ছে, আবার একই খালে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো ১ টি বড় সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
খালে হাওরের ফসল রক্ষার স্থায়ী বাঁধ থাকার পর কেন সরকারের এত টাকা অপচয় হচ্ছে এর জবাব নেই কর্তৃপক্ষের কাছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমানের সাথে চলমান আটগাঁও ইউপি র মামুদনগর গ্রামের ২টি সেতু নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান বলেছেন খালের বাঁধ না কি কেটে ফেলা হবে, তাই সেতু করা হচ্ছে। সেখানে সেতুর প্রয়োজন কি না, জানতে চাইলে পিআইও আজিজুর বিষয়টি এড়িয়ে যান।
আটগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম আজাদ বলেন, খালে ১ টি ছোট সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। আরেকটি ৩ কোটি টাকার বড় সেতু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নৌ চলাচলের জন্যে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে দেয়া হবে, এজন্য আগাম সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
এবিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন উপজেলায় বেশ কয়েকটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে অহেতুক। যেখানে সড়কই নেই সেখানে সরকারের কোটি কোটি টাকা পানিতে ফেলা হচ্ছে। আগের ন্যায় এবারও মামুদনগরে ২ টি সেতু হচ্ছে। এসব বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।
দৈনিক দিরাই শাল্লা
২:৩০ অপরাহ্ণ