দিরাইয়ে পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্তে ইউপি সদস্যসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সমাজচ্যুত

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ-
নিজ গ্রামের দুই ছেলের চুরির অপরাধের ধায় না নেয়ায় এক ইউপি সদস্যসহ মুক্তিযুদ্ধো পরিবারের সবাইকে সমাজচ্যুত করে রেখেছেন চার গ্রামের মাতব্বরেরা।এমনকি ইউপি সদস্যেকে যাবতীয় দাপ্তরিক কাজ থেকে বিরত রেখে ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য দিয়ে সকল কাজকর্ম চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে এমন রায় হয়।ফলে ইউপি সদস্যসহ পরিবারের কাউকে পাশের বাজারে গেলে নিষেধ করায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি। ইউপি সদস্য বিষয়টি মৌখিক ভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি থানা পুলিশের স্মরনাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন। ছয়দিন পূর্বে থানা পুলিশের বিট অফিসার এস আই আমির হোসেন স্থানীয় বাজারে গিয়ে চার গ্রামের মাতব্বরদের সাথে আলাপ করে এমন অমানবিক সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করতে বললেও এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি। চোরাই মেশিনগুলো উদ্ধার করে বাড়িতে নেয়ার পরও মাতব্বরদের পরামর্শে গত ১০ এপ্রিল অনিল দাস ও অনিল তালুকদার নামের দুই ব্যক্তি ইউপি সদস্যকে প্রধান আসামি করে আদালতে তিন জনের নামে পৃথক দুটি অভিযোগ দাখিল করার খবরও পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে এসকল মাতব্বর ও সংরক্ষিত নারী সদস্যের সাথে আলাপকালে এর সত্যতা পাওয়া যায়। যার অডিও ভিডিও সকল রেকর্ড এ প্রতিবেদকের নিকট সংরক্ষণ রয়েছে। ঘটনাটি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের ছাদিরপুর গ্রামের প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধার আব্দুল মোতালেব এর ছেলে ইউপি সদস্য মাসুক মিয়া ও তার পরিবারকে ঘিরে। তবে চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র কুমার তালুকদার বলেন স্থানীয় মাতব্বরদের এমন সিদ্ধান্তে আমি দ্বিমত পোষণ করেছি। আর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য নিয়াশা তালুকদার বলেন সদস্য মাসুক মিয়ার উপর সমাজের মাতব্বরদের নিষেধ থাকায় তার যাবতীয় কাজকর্ম আমাকেই করতে হচ্ছে।
আদালতে দাখিলকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায় গত ২৯/৩/২০২৩ইং তারিখ রোজ বুধবার রাত অনুমান ১১ঘটিকায় বাদী অনিল তালুকদারের বসত বাড়ীর পাশে নদীর পাড়ে রাখা দুটি পাওয়ার ট্রিলার মেশিন এবং দুটি মেশিনের লোহার চাকা চুরি হয়, যার মূল্য প্রায় ১লাখ বিশ হাজার টাকা। এবং ৩০/৩/২০২৩ইং তারিখ রোজ বৃহস্প্রতিবার রাত ১২টার দিকে বাদী অনিল দাসের বসত বাড়ীর নিকট কালী মন্দিরের পাশে করচ গাছের নিচে রাখা ১টি পাওয়ার ট্রিলার মেশিন চুরি হয়, যার মুল্য ৫০ হাজার টাকা। দুই বাদির মোট তিনটি মেশিন ও দুটি মেশিনের লোহার চাকা চুরির ঘটনায় এলাকার সচেতন মানুষেরা মিলে অনেক খোজাঁখোজির পর স্থানীয় নোয়াগাও শিববাজারে ভাঙ্গারী দোকানে জিজ্ঞাসা করলে ভাঙ্গারী দোকানের মালিক জানান তিনি ছাদিরপুর গ্রামের ছিদ্দিক আলীর ছেলে কাউছার ও আব্দুল কদ্দুসের ছেলে তোহা মিয়ার নিকট থেকে তিনটি মেশিন ও দুইটি লোহার চাকা ক্রয় করেন। এ ঘটনায় পরে এলাকাবাসী ৩১/৩/২০২৩ইং তারিখ বিকাল সাড়ে ৩টায় শিববাজারের মাছ বাজার কমিটির সভাপতি তাপস রঞ্জন তালুকদার আহবানে চার গ্রামের মাতব্বরদের উপস্থিতিতে বিচার শালিসের আয়োজন করেন । ঐ শালিসে উপস্থিত ইউ/পি সদস্য মাসুক মিয়া মেশিন চুরির সাথে জড়িত তার আত্মীয় এবং তিনি সেখানে উপস্থিত হন।
এ সময় কাওছার ও তোহা মিয়াকে এনে পরের দিন বিষয়টি স্থানীয় ভাবে সমাধান করবেন বলে পঞ্চায়েতের কাছ থেকে সময় নিয়ে চলে যান। পরের দিন আবার ইউপি চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র কুমার তালুকদারসহ শালিসি বৈঠক হলে চোরদের নিয়ে আর পঞ্চায়েতদের সামনে আসেননি ইউপি সদস্য মাসুক মিয়া। সাবেক ইউপি সদস্য ও বাজার কমিটির সভাপতি তাপস তালুকদার এলাকার লোকজন দিয়ে অনেক বার মাসুক মিয়াকে বলার পর তিনি আসেননি।পরে পঞ্চায়েত কমিটির সিদ্ধান্তে উদ্ধারকৃত মেশিনগুলোর মালিক গাজিয়ার গাও গ্রামের অনিল তালুকদার ও অনিল দাসের জিম্মায় দেয়া হয়। এ সালিশি বৈঠকেই ইউপি সদস্য মাসুক মিয়া ও তার পরিবারের লোকজনকে সামাজিকভাবে বয়কট করাসহ ও আদালতে গিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার পরামর্শ পাওয়ার পরই এই অভিযোগগুলো দায়ের করেন মেশিনের মালিকদ্বয়। সালিসি বৈঠকে উপস্থিত সাবেক ইউপি সদস্য অতুল তালুকদার,গাজিয়ারগাও গ্রামের বৃদ্ধ প্রসন্ন দাসসহ একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানান ইউপি চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র কুমার তালুকদার এর উদ্যোগেই পরের দিন চুরির ঘটনায় একটি বৈঠক হয়, সেই বৈঠকে মেম্বার মাসুক মিয়া বাড়িতে থেকেও এলাকাবাসীর ডাকে আসেনি।ঐদিন বৈঠকে না থাকায় তার বিরুদ্ধে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এরপর থেকে সেও তার পরিবারের লোকজন কেউ বাজারে আসেনা। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য নিয়াশা তালুকদার বলেন, চুরির বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব লাগছে, এটা নিয়ে মাতবরেরা আমাকে ওয়ার্ডের দায়িত্ব দিয়েছে মাসুক মেম্বারের কাজ করতে, এরপর থেকে আমি তার সকল কাজ করতেছি।ঐদেখেন চারগ্রামের মাতবররা তালিকা করে দিছে দশ কেজি (ভিজিএফ)চালের,চেয়ারম্যানও জানেন, আজকে আমি দস্তখত দিয়ে চেয়ারম্যান অফিসে জমা দিতে যাইতেছি।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মাসুক মিয়া বলেন, আমার গ্রামের দুই ছেলে কর্তৃক মেশিন চুরির ঘটনায় আমার ও আমার পরিবারকে আমাদের চেয়ারম্যান সাহেবের উপস্থিতিতে বৈঠক করে সমাজ্যুত করে রেখেছে এলাকার মাতবরেরা।এমন অমানবিক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না, এ বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছি। এরপর থানার বিট পুলিশ অফিসার এস আই আমির হোসেন তদন্ত করে গেছেন, তবে কোন সুরাহা হয়নি। ফেইসবুকে দেখলাম এ চুরির ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে আদালতে দুটি অভিযোগ করা হয়েছে। মেশিনের মালিক অনিল দাস বলেন মেশিন গুলো আমরা বাড়িতে নিয়ে এসেছি, মাতবরদের পরামর্শে মাসুক মেম্বারকে প্রধান আসামি করে আদালতে দুটি মামলা করেছি। দিরাই থানার এস আই আমির হোসেন বলেন,খবর পেয়ে সরেজমিন গিয়ে এলাকার লোকজন ও বাজার কমিটির সাথে আলাপ করে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি। রফিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র কুমার তালুকদার বলেন, দুটি মেশিন চুরির ঘটনায় নোয়াগাও বাজারে একটি সালিসি বৈঠকে আমি ছিলাম,মেম্বার মাসুক মিয়াকে সমাজচ্যুতির বিষয়টি সঠিক নয়।