আজ মহান মে দিবস

দিশা ডেস্ক:: মহান মে দিবস আজ। দিনটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা দিন। দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের এদিন বুকের রক্ত ঝরিয়েছিলেন শ্রমিকরা। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন পৃথক বিবৃতিতে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি ও অধিকার এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছে।

‌‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশে আজ পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। দিনটি শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের চরম আত্মত্যাগে ন্যায্য অধিকার আদায়ের এক অবিস্মরণীয় দিন। আজ সরকারি ছুটির দিন। প্রতিবারের রাষ্টীয়ভাবে দিবসটি পালন উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করলেও এবার করোনার কারণে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি প্রতিবারই এই দিনটিতে বড় বড় শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করলেও এবার সকল কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণা করার হয়েছে। তবে দিবসটি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং টেলিভিশন ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহান মে দিবস সারাবিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য ও সংহতির প্রতীক উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো শ্রমনিবিড় উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও হৃদ্যতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিককল্যাণ ফাউন্ডেশন (সংশোধন) আইন ২০১৩’ ও বিধি, জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নীতিমালা এবং গৃহকর্মী সুরা ও কল্যাণনীতি প্রণয়ন করেছি। শিল্পকারখানায় বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে সার্বিক নিরাপত্তা সন্তোষজনক রাখার লক্ষ্যে মানসম্মত ও যথাযথ পরিদর্শন ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করেছি।

Advertisement

এসব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সুফল শ্রমজীবী মানুষ পেতে শুরু করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে লাগসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার এবং উন্নত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।

মহান মে দিবসের এই দিনে চলমান সংকটে কর্মহীন, খেটে খাওয়া, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের সকল বিত্তবান ও স্বচ্ছল মানুষদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার দেয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। একই সাথে করোনা সংকটের এই সময়ে শ্রমিকদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি ও সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মতো নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য শিল্পমালিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। বিশেষ করে দেশ ও জাতির বৃহৎ স্বার্থে এই সময়ে যেসকল শ্রমিক ভাইবোন জরুরি সেবা ও কাজে নিয়োজিত রয়েছে তাদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

১৮৮৬ সালের এই দিনে শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের অধিকারের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্প এলাকায় ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। আন্দোলন চলাকালে শিকাগোর হে মার্কেটের সামনে বিশাল শ্রমিক জমায়েতে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ১১ শ্রমিক। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র ছাড়িয়ে ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের স্মরণে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই বিশ্বের সব দেশেই দিবসটি পালন করা হয়।