দিরাই প্রতিনিধি ঃ-সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে তিন মাস পূর্ব থেকে সমাজচ্যুত করে রাখা এক পরিবারের বাড়িঘরে হামলা,ভাংচুর ও লুটপাট করেছে গ্রামবাসী।সোমবার দিবাগত রাত দশটায় এ হামলা ভাংচুর হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমাজচ্যুত পরিবারের লোকজন।দিরাই উপজেলা রফিনগর ইউনিয়নের বলনপুর গ্রামের বিনয় ভূষণ চৌধুরীর বাড়িতে এই ঘটনাটি ঘটে। হামলায় বিনয় ভূষণ চৌধুরীর বড় ছেলে রুবেল চৌধুরী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে রাতেই ওসি (তদন্ত) রতন দেবনাথের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন,খবর পেয়ে সাথে সাথে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে।
থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দিরাই উপজেলার বলনপুর গ্রামের সামনে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত গোচারণভূমিটি কয়েক বছর আগে বিনয় ভূষণ চৌধুরীর ভাই প্রদীপ চৌধুরীর নামে রেকর্ড ভুক্ত হয়।
এনিয়ে গ্রামবাসীর সাথে প্রদীপ চৌধুরী পরিবারের বিরোধ তৈরী হয় । বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা সালিসি বৈঠকেও সমাধান করা সম্ভব হয়নি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রদীপ চৌধুরীর পরিবার আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিলে গ্রামবাসী স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রদান করেন। বিনয় ভূষণ চৌধুরীর পরিবারের অভিযোগ, নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্ট হয় রুবেল চৌধুরী, এনিয়ে গ্রামের লোকজনের সাথে তাদের বিরোধ চরম আকার ধারন করে। এক পর্যায়ে কয়েকদিন পর গ্রামের লোকজন একত্রিত হয়ে বিনয় ভূষণ চৌধুরীর পরিবারকে সমাজ্যুত করার ঘোষনা দেয়। বন্ধ করা হয় তাদের সাথে গ্রামের লোকদের, চলাফেরা, কথা বার্তা ও সামাজিক সম্পর্ক। এই অবস্থা চলাকালেই বিনয় ভূষণ চৌধুরীর ছেলে রুবেল চৌধুরী হাওর রক্ষা বাধের একটি কমিটির(পিআইসি) সভাপতি মনোনীত হয়। গ্রামবাসী এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রুবেল চৌধুরীর প্রকল্প কাজে বাধা প্রদান করেন। তাদের বাধার কারনে এক পর্যায়ে রুবেল চৌধুরী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিকট প্রকল্প কাজটি ফেরত দিতে বাধ্য হন।
তাছাড়া সমাজচ্যুত পরিবারে গ্রামের কয়েকজন দরিদ্র লোক মৌসুমী চাকরির কাজে নিয়োজিত হলে তাদেরকেও ফিরিয়ে নেন গ্রামবাসী। এ অবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় থাকে সমাজচ্যুত পরিবারের লোকজন। পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়ে থানা সাধারণ ডায়রি করা হয়। বিনয় ভূষণ চৌধুরীর ছেলে রুবেল চৌধুরী বলেন, আমি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করার ও এজেন্ট হওয়ার কারনে তিন মাস আগে গ্রামের লোকজন আমাদের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেয়।গ্রামের কোন লোক আমাদের সাথে চলাফেরা ও কথা বার্তা বললে দশ হাজার টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত দেয় গ্রাম্য মাতুব্বরগন। প্রায় দশ দিন পূর্বে আমাদের বোর জমির ধান কাটতে গেলে গ্রামের লোকজন বাধা দেয় আমি ত্রিপল নাইনে কল দিলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এর পর থেকে গ্রামের লোকজন আমাদের এলাকা ছাড়া করার ঘোষণা দিয়েছে। সোমবার দিবাগত রাতে আমাদের বাড়িঘর হামলা ভাংচুর ও লোটপাট চালায় তারা, এসময় আমাদের মন্দির ঘরে হামলা করে দেবতার মুর্তি ভাংচুর করে। আমরা ঘর বন্দী হয়ে থাকি।পরে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সরে জমিনে মঙ্গলবার বিকাল দুইটায় বলনপুর গ্রামে গেলে দেখা যায়,দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন। এসময় পুলিশের ভয়ে গ্রামের কোন পুরুষ লোক পাওয়া যায় নি। গ্রামের মিঠু সরকারের স্ত্রী জোনাকি সরকার বলেন, আমার স্বামী বিনয় ভূষণ চৌধুরীর বাড়িতে আট মাসের চুক্তিতে চাকরিতে ছিলেন,গ্রামের মাতবররা তাদের পরিবারকে সমাজচ্যুত করলে, দেড় মাস পর চাকরি থেকে চলে আসতে হয়েছে। এব্যাপারে দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন,খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করা হয় নি, কোন মামলা হয়নি।